

একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন- বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় প্রথম অভিজ্ঞতা। এর আগে কয়েকটি গণভোট হলেও সেগুলো পৃথকভাবে হয়েছে। এবার একদিনে দুটি ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আনুসঙ্গিক সামগ্রী জোগাড় থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, গ্রামে-গঞ্জে সচেতনতামূলক প্রচার এবং ভোট গণনার ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগার বিষয়টি মাথায় নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গণভোট ও সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পর থেকে তারা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তাদের নতুন করে কিছু করতে হবে না। ব্যালট বাক্স যা আছে তা দিয়ে দুটি ভোট একসঙ্গে করা সম্ভব। তবে কিছু ভোটকক্ষ বাড়ানো লাগতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাও লাগবে। প্রথমবার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পোস্টাল ব্যালটে অংশ নেবেন। স্থায়ী ভোটারের পাশাপাশি বিদেশের লাখ দশেক ভোটারকে নিয়ে আয়োজন হবে এই নির্বাচন। সেটার প্রস্তুতিও নিচ্ছে ইসি।
ইসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের সব বিভাগকে আগে থেকেই গণভোটের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিকল্পনায় নতুন সমন্বয় আনতে হবে।
১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে তিনবার গণভোট হলেও কখনো জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট হয়নি। আগের দুই গণভোটগুলোতে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বাড়াতে হবে ভোটকক্ষ, কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সরঞ্জামাদি বাড়াতে হবে গণভোটের জন্য। প্রচারণায় বাড়তি ব্যয়ও ২০ শতাংশের বেশি হতে পারে।
একই কেন্দ্রে দুই ধরনের ভোট গণনায় দুটি আলাদা দল রাখতে হবে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, গণভোটের ব্যালট গণনায় সময় লাগবে বেশি। জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা দাবি জানাচ্ছিল, নির্বাচনের দিনই যেন গণভোট হয়।
অবশেষে বিএনপির মতামতই প্রাধান্য পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সরকারপ্রধান বলেন, এতে নির্বাচন আরও ‘উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী’ হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর কমিশনে আলোচনা করে এ ব্যাপারে মতামত জানানো হবে।ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, ভোটকক্ষ বাড়ানো হলে একই দিনে সংসদ ও গণভোট নির্বিঘ্নে শেষ করা সম্ভব। তবে প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে—গণভোটের ব্যালট ইস্যু ও গণনার আলাদা পদ্ধতি কর্মকর্তাদের শিখতে হবে। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের জন্য দুটি ব্যালট পাঠানোও প্রযুক্তিগতভাবে বড় চ্যালেঞ্জ।
অন্যদিকে ইসির সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ মনে করেন, একদিনে দুই ভোট হলে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। তবে গণনা ধীর হবে, এজন্য দক্ষ জনবল ও আগাম মহড়ার প্রয়োজন হবে। এবারের সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৮০০ কোটি টাকার প্রস্তাব রয়েছে। আলাদা গণভোট করলে অতিরিক্ত ব্যয় হতো। একসঙ্গে হলে ব্যয় সাশ্রয় হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবস্থাপনার কাজ বাড়বে দ্বিগুণ—বিবেচনায় নিতে হবে কেন্দ্র, ব্যালট, প্রশিক্ষণ, আইন-প্রক্রিয়া ও গণনার অতিরিক্ত সময়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হওয়ার কথা রয়েছে। একই দিন চারটি প্রশ্নে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
প্রকাশক ও সম্পাদক- মোঃ হযরত আলী, নির্বাহী সম্পাদক- মোঃ মেহেদী হাসান
বার্তা সম্পাদক- এস এম ইকবাল সুমন । অফিস- গোমস্তাপাড়া, রংপুর-৫৪০০ । মোবাইল- ০১৮৯৬ ৪৩২৭০১
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী | Developed BY Rafi It Solution