আন্তর্জাতিক

কুয়েতে শ্রমিকদের ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ৪৯

ডেস্ক   আন্তর্জাতিক

১২ জুন ২০২৪


| ছবি: সংগৃহীত

কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলের আহমাদি গভর্নরেটের মানগাফ এলাকায় বিদেশি শ্রমিকদের বহুতল আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে পৌঁছেছে। বুধবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকের এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন। হতাহতদের বেশিরভাগই দেশটিতে কর্মরত ভারতীয় প্রবাসী শ্রমিক।

দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ ফাহাদ ইউসুফ সৌদ আল-সুবাহ ভবন মালিকের আইন লঙ্ঘনের কারণে এই ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন। নিহতদের মধ্যে ৪০ জনই ভারতীয় নাগরিক বলে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিকদের দেখতে মানগাফের বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন কুয়েতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় দূতাবাস বলেছে, আগুনে আহত ৩০ জনের বেশি ভারতীয় নাগরিককে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৪৭৭ জনের বেশি কর্মীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এই দুর্ঘটনার বিষয়ে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। এতে বলা হয়েছে, কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার বাসিন্দাসহ কয়েকজন ভারতীয় মারা গেছেন। কেরালার একটি সরকারি সংস্থা বলেছে, কুয়েতে কেরালার ১১ জনসহ মোট ৪১ ভারতীয় মারা গেছেন বলে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকরা জানিয়েছেন। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কুয়েতে হতাহতের এই পরিসংখ্যান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কুয়েতের উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ ফাহাদ ইউসুফ সৌদ আল-সাবাহ বলেছেন, রিয়েল এস্টেট মালিকদের লোভের কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। ভবনটিতে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কোনো আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না কিংবা সেখানে তারা কী করছিল তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের শিকার ভবনটি ভারতীয় ব্যবসায়ী কেজি আব্রাহামের মালিকানাধীন এনবিটিসি গ্রুপের বলে জানিয়েছে কেরালা-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওনমানোরামা। অগ্নিকাণ্ডে বেঁচে গেছেন মিসরীয় এক নাগরিক। তিনি কুয়েতে গাড়িচালক হিসাবে কাজ করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ভবনের নিচ তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। যারা ভবনের ওপর তলায় ছিলেন তারা পালাতে পারেননি। তিনি বলেন, ভবনটি ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়।

কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-সাবাহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই দুর্ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মানগাফে অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

কুয়েতের পুলিশের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইদ রাশেদ হামাদ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, রাজধানী কুয়েত সিটির দক্ষিণে উপকূল লাগোয়া মানগাফ শহরে লাগা আগুনের বিষয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সকাল ৬টায় জানানো হয়েছিল। পরে ফায়ার বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশের জ্যেষ্ঠ আরেক কমান্ডার বলেছেন, ‌‌‘‘যে ভবনটিতে আগুন লেগেছে সেটি শ্রমিকদের জন্য ব্যবহার করা হতো। অগ্নিকাণ্ডের সময় সেখানে অনেক শ্রমিক ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েক ডজন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডে অনেকে মারা গেছেন।’’ কুয়েতে অগ্নিকাণ্ডে ভারতীয় শ্রমিকদের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আগুনের ঘটনাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

সূত্র: রয়টার্স।

12