শিল্পখাতে গ্যাসের দাম আবারও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে দেড়গুণ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি। জ্বালানি বিভাগের অনুমোদনের পর গতকাল সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে এ প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। কমিশন সভায় বিইআরসি বাড়তি দামের অনুমোদন দিলেই বাড়বে গ্যাসের দাম। তবে এ বিষয়ে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চলতি মাসের কমিশন সভা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ পরবর্তী কমিশন সভা বসবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল সোমবার বিইআরসিকে পাঠানো পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়, পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহৃত গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বাইরে বাকি খরচের জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
শিল্পে গ্যাস ব্যবহারের এক চিত্র তুলে ধরেছে পেট্রোবাংলা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, শিল্পে অনুমোদিত লোডের চেয়ে ১৪ কোটি ৭৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাপটিভে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ঘনমিটার গ্যাস বাড়তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে পুরোনো কারখানায় বাড়তি এমন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে।
পেট্রোবাংলা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে দেশে উৎপাদিত গ্যাস কিনে নেয়। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। এছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে খরচ হচ্ছে প্রতি ইউনিটে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। তবে নতুন করে ভর্তুকি দিতে রাজি নয় সরকার। ফলে এখন এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন শিল্পে গ্যাসের মূল্য ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা। ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। পরে ক্যাপটিভে আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।
গত বছরের ২৮ আগস্ট গণশুনানি ছাড়াই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিইআরসির নির্বাহী ক্ষমতা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটে বলা হয়, এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ৩৪ (ক) ধারা বিলুপ্ত হবে। এতে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ৩৪ (ক) ধারা প্রবর্তন করেছিল, সেটি বাতিল হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ এর সংশোধন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। আইনটির ৩৪ (ক) ধারায় সংশোধন করা হয়।