ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতনের আগে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে দেশব্যাপী চালানো হয়েছিল নির্মম হত্যাকাণ্ড। পরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেই মামলার রায় চলতি বছরই ঘোষণা করা হতে পারে।
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ। বর্তমানে এ দুই ট্রাইব্যুনালে চারটি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলায় সর্বশেষ সাক্ষীর জবানবন্দি শেষ হয়েছে। এখন তার জেরা শেষ হলে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) জবানবন্দি শেষে জেরার কার্যক্রম চলছে। জেরা শেষ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই নিয়ম অনুযায়ী আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষী হওয়ার কথা। কিন্তু শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলায় যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু হবে। যুক্তি-তর্ক শেষে রায়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। তবে কবে নাগাদ মামলায় রায় হতে পারে সেটি নিয়ে মুখ খোলেননি প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের কেউই।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে এই মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীর জবানবন্দি দিয়েছেন। এখন তার জেরা চলছে। তার জেরার মধ্য দিয়েই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে।
মামলার কার্যক্রম কবে শেষ হবে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর বলেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে না হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে শেষ হতে পারে।
‘সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ ঠিকঠাক না বলতে পারলেও চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি মামলার কার্যক্রম শেষ হতে পারে। তবে রায় ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ মাননীয় ট্রাইব্যুনালের।’ -মো. মিজানুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
রায় ঘোষণা কবে হতে পারে জানতে চাইলে মিজানুল জানান, রায় ঘোষণার দিন ঠিক করা এবং রায় ঘোষণা করার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের। তবে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন টিম আশাবাদী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল/ ফাইল ছবি
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রয়াত লেখক-গবেষক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের দেওয়া জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ প্রদর্শন ও কল রেকর্ড শোনানো হয়।
প্রসিকিউশন জানায়, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য শেষে উভয়পক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। যুক্তি-তর্ক শেষ করার পরে মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। সে হিসেবে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখের মধ্যে শেষ হতে পারে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম। রায় হতে পারে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে।
মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার মামলায় জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষ হতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। রায় লিখতে একটু সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে এই মামলার রায় নভেম্বরে হতে পারে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৪ জুলাই আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামিরা হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। এসব আসামির মধ্যে প্রথম চারজন পলাতক। অন্য চারজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও বেশ এগিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পাঁচটি মরদেহ ও জীবন্ত একজনকে পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলার বিচারকাজ চলছে ট্রাইব্যুনাল-২ এ। এই মামলায় এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন আটজন। মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন আটজন। সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাইফুল ইসলামসহ আট আসামি পলাতক।
জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ/ছবি: সংগৃহীত
জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে ট্রাইব্যুনাল-২ এ। এই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ছয়জন। আসামিদের মধ্যে বেরোবির তৎকালীন উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা এবং পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি এবং একই এলাকায় অন্য দুজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে এএসআই চঞ্চল সরকার গ্রেফতার হয়েছেন।
‘আশুলিয়ায় হত্যার পর মরদেহ পোড়ানো ও আবু সাঈদের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। এরপর রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন ট্রাইব্যুনাল।’ -গাজী মনোয়ার হোসেন তামীম, প্রসিকিউটর (প্রশাসন), আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে আট অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। তা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠনের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেছন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়।
ইনুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে টিভি চ্যানেলে বক্তব্য দেন আসামি হাসানুল হক ইনু। আন্দোলনকারীদের বিএনপি, জামায়াত, সন্ত্রাসী, জঙ্গি ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক ট্যাগ দিয়ে উসকানি দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে সায় দেন তিনি। কারফিউ জারিপূর্বক প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যাসহ নির্যাতনকে কৌশলে সমর্থন দেন। আন্দোলন দমনে গুলি, বোমাবর্ষণ ও হত্যাসহ শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ অনুমোদন করেন। এসব পরিকল্পনা কার্যকর করতে হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও সম্পৃক্ত থাকাসহ আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে ইনুর বিরুদ্ধে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল/ ফাইল ছবি
ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলাগুলোর কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হতে পারে বা রায় ঘোষণা হতে পারে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ ঠিকঠাক না বলতে পারলেও চলতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ছয়টি মামলার কাযর্ক্রম শেষ হতে পারে। তবে রায় ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ মাননীয় ট্রাইব্যুনালের।’
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি শেষ হলেই যুক্তিতর্ক শুরু করবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন বিভাগ। পরে ডিফেন্স টিমের যুক্তিতর্ক শুরু হবে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায়ের দিনক্ষণ ঠিক করবেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যেই উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মিজানুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বাকি পাঁচ মামলার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, রামপুরায় একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলিয়ে থাকা ব্যক্তিকে গুলির ঘটনার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিনক্ষণ ঠিক করা আছে। অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয় মরদেহ পোড়ানোর আলোচিত ঘটনায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। চানখাঁরপুলে শিক্ষার্থী আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ১৫ বা ২০ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে।
মিজানুল ইসলাম বলেন, কুষ্টিয়ায় সাতজনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় সাক্ষীর জেরা শেষ হতে একটু সময় লাগছে। এটা শেষ হতে হয়তো বা আরও এক মাস বেশি সময় লাগতে পারে। তবে ট্রাইব্যুনালে চলমান ছয়টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে পারবো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মনোয়ার হোসেন তামীম বলেন, ‘আশুলিয়ায় হত্যার পর মরদেহ পোড়ানো ও আবু সাঈদের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। এরপর রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন ট্রাইব্যুনাল।’
সব অভিযোগ প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে রয়েছে জানিয়ে গাজী মনোয়ার হোসেন তামীম বলেন, মামলার রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে আশা করছি।