1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংস্কার, সেই সংস্কার আদায় করে ছাড়ব - আমির শফিকুর রহমান | দৈনিক সকালের বাণী
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন সংস্কার, সেই সংস্কার আদায় করে ছাড়ব – আমির শফিকুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৩২ জন দেখেছেন

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা সংস্কারগুলো আদায় করে ছাড়ব। সুষ্ঠু নির্বাচনও ইনশাআল্লাহ আদায় করে ছাড়ব।’ শুক্রবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগরী ও জেলা জামায়াত এ জনসভার আয়োজন করে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করব। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোটকেন্দ্রে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলতে দেওয়া না, কালো টাকার কোনো খেলা সহ্য করা হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাধ্য মতো জনগণের সুখে দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। জনগণের প্রত্যেকটি ন্যায় দাবি আদায়ের জন্য সমানতালে ঘরে বাইরে লড়াই করেছে। এদেশের জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির অধ্যাপক গোলাম আযম সর্বপ্রথম কেয়ারটেকার সরকারের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিলেন। যার ভিত্তিতে ১৯৯১ সালে একটা, পরপর আরো দুটি-তিনটি নির্বাচন হয়েছে। তারপর থেকে সেই কেয়ারটেকার সরকারকে খেয়ে ফেলা হয়েছে।’ আমিরে জামায়াত বলেন, ‘সাড়ে পনোরো বছরে আমাদের অনেক নেতৃবৃন্দকে খুন করা হয়েছে। দুইজন আমির, দুইজন নায়েবে আমির, দুইজন এ্যসিস্টেন্ট সেক্রেটারী জেনারেল ও একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্যসহ এরকম করে একদম মাথা থেকে শুরু করে ১১ জন নেতাকে আমাদের বুক থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।

 

আজকে জীবন্ত যে শহীদ (এটিএম আজহারুল ইসলাম) আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে তার জীবনকে মহান আল্লাহর জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করার যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন, আমাদের ওই সমস্ত নেতৃবৃন্দ বেঁচে থাকলে বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে আজকের এই হতাশাগ্রস্ত জাতিকে আশা জাগানিয়া কথা বলতেন। জাতিকে নতুন করে পথ দেখাতেন।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদদের শাহাদতের জীবন বাজি রাখা লড়াই এবং জীবন উৎস্বর্গ করার বিনিময়ে আজকে বাংলাদেশের মানুষ আমরা যারা মুক্তি পেলাম, তারা কেন ধৈয্য ধরতে পারছি না। চতুর্দিকে পত্রিকার পাতা খুললে, স্যাটেলাইট মিডিয়ার সামনে দাঁড়ালে-বসলে আজকে বাংলাদেশের কোনো না কোনো এলাকায় আমরা বিভৎস কিছু মানুষের থাবা দেখতে পাচ্ছি। আমার মায়ের ইজ্জ্বতের ওপর এই থাবা দেখছি। মানুষের জীবনের ওপর এই থাবা দেখছি। জনগণের সম্পদের ওপর এই থাবা দেখছি। এমনকি দিশেহারা হয়ে তাদের যখন হুশ ঠিক থাকে না তখন নিজের লোককেও নিজেরা খুন করতে কুষ্ঠাবোধ করে না। কেনরে ভাই, তোমাদের এই অবস্থা?’

নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সারা বাংলাদেশকে পাটগ্রাম বানিয়ে ফেলছে একদল। এই অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা সেই সংস্কারগুলোর কথা বলেছি। আমরা ওই সংস্কারও আদায় করে ছাড়ব এবং সুষ্ঠু নির্বাচনও আমরা ইনশাআল্লাহ আদায় করে ছাড়ব। জামায়াতের আমির বলেন, ‘কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে থাকেন, আমরা বললো মহান আল্লাহর সাহায্যে সেই স্বপ্নকে আমরা দুঃস্বপ্নে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ্। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রশাসনিক ক্যু করতে দেওয়া হবে না। ভোট কেন্দ্রে কোনো চলবে না। কোনো কালো টাকার খেলা সহ্য করা হবে না।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদের সঙ্গীরা তোমরা জেগে ওঠো আরেকবার। তোমরা বৈষম্যহীন সমাজের জন্য লড়াই করেছিলে। আমরা তোমাদের জন্য একটা নিরাপদ বাংলাদেশ মহান আল্লাহর সাহায্য নিয়ে গড়ে রেখে যেতে চাই। যুবকদের হাতগুলো সামনে যেন মজবুত থাকে। নির্বাচনের সময় কেউ যেন কোনো প্রকল্প করার সুযোগ না পায়। জনগণের ন্যায্য ভোটে যারাই নির্বাচিত হবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের অভিনন্দন জানানোর জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত।’
বিভাগীয় এই জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সাথে মিলিত হতে পারব, এটা কোনো সময় চিন্তায় আসেনি। আমি কারাগারে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহ্ যে আমাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে জনতার মঞ্চে নিয়ে আসবে, এটা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানতো না। আজকে আমি ফাঁসির মঞ্চ থেকে লক্ষ জনতার মঞ্চে হাজির হয়েছি। সবই আল্লাহর মেহেরবানী ও আল্লাহর রহমত।’
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যে গলায় আমার দড়ি রশি ঝুলানোর কথা ছিল সেখানে আমার ফুলের মালা পড়ে। সবই আল্লাহর রহমত। আমাকে ফাঁসি দেয়ার জন্য মিথ্যা স্বাক্ষী দিয়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর চেষ্টা করা হলো। আল্লাহ্ আমাকে মুক্ত করেছেন। আমার পরিবার থেকে আমি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমার স্ত্রীও আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। আমার ছেলেও আমার সাথে গ্রেপ্তার করেছিল। আমি বলেছি বাবা মুক্ত হলে তুমি দেশের বাইরে চলে যাও, তা নাহলে তোমাকে গুম করবে হত্যা করবে।’

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু আমাকে অপরাধী বানানো হয়ে গেল। রংপুরবাসী স্বাক্ষী এবং যারা স্বাক্ষী দিয়েছেন তারাও পরবর্তীতে বলেছেনথ জুলুম করে তাদেরকে স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমার কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই, দুঃখ নেই। আমি চাই আমার অঞ্চল আমার বাংলাদেশকে মানুষের জন্য বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মুক্তির প্রথম সোপান হচ্ছে আবু সাঈদ। যার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল। যার পরিসমাপ্তি হয়েছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। ৫ আগস্ট না হলে আপনারা আমার জানাজা পড়তেন। আমার মুক্তির জন্য আবু সাঈদ আমার পক্ষে কাজ করেছে। তার মৃত্যুই আমাকে মুক্তির পথ দেখিয়ে দিয়েছে। আমি তার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি।’

দলীয় নেতাদের হত্যায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে (মঞ্চে) যারা আছে তাদের চেয়ে আমার বয়স একটু বেশি। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের অনেকেই নেই। আমাদের দলের প্রধান মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মিথ্যা মামলায় হত্যা করা হয়েছে। আমাদের পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, তাকেও হত্যা করা হয়েছে। আমাদের পার্টির দুইজন সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল কামরুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা এবং নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসিম সাহেবকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই সমস্ত হত্যার বিচার দাবি জানাচ্ছি। এই কারাগারে বিনাচিকিৎসায় অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা আবুল কালাম ইউসুফ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে তা কি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, দুনিয়ার কোনো দেশে এরকম কোনো উদাহরণ নেই। কিন্তু তাদেরও তো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর চেষ্টা করা হলো। এটা আজব এক বাংলাদেশ। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের আজব এক চরিত্র।’

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। বিশেষ বক্তা ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এতে সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির আজম খান। এছাড়াও জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন জনসভায়।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর রংপুর মহানগরী ও জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এই জনসভা বিকেল ৩টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জুমার নামাজের পরই জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠ। লোকসমাগম মাঠ ছেড়ে উপচে পড়ে সড়কে। জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )