উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা গাইবান্ধা। এ জেলাতেও সবজি চাষ হয়। তাই সবজির ভান্ডার হিসাবেও বিখ্যাত এ জেলা। চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এ জেলার কৃষকেরা। বর্তমানে তারা ক্ষেতে চারা রোপণ ও গাছে আসা সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ সবজি বাজারে বিক্রি করছেন।
এজেলার চাহিদা মিটিয়ে শাক-সবজি যাচ্ছে পাশের জেলাগুলোতে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে সহযোগিতা করছেন। জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন শাক-সবজি। এছাড়াও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ভ্যানে করে বিক্রি করতে দেখা যায়।
গাইবান্ধা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতবছর জেলার সাতটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০৬০ হেক্টর জমি। অর্জিত হয়েছিল লক্ষমাত্রার কাছাকাছি। চলতি বছর জেলায় সবজি চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এখন পর্যন্ত ৬৯৪৭ হেক্টর জমি। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবর ১৫ তারিখ পর্যন্ত যেসব সবজি চাষ হবে সবই আগাম। ইতি মধ্যে আগাম ২৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সময় থাকায় আরও চাষের পরিমাণ বারতে পারে। জেলার নিম্নাঞ্চলের ২২ হেক্টর জমিতে লাগানো শাক-সবজি পানির নিচে তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরে ঘুম থেকে উঠে জমিতে সবজির চারা রোপণ, পরিচর্যা, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজেদের চাহিদা মেটাতে ও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। ভালো দাম পেতে আগাম শাক-সবজির চাষে ঝুকছেন অনেক কৃষকেরা। তাই এবছর শীত শুরুর আগেই ফুলকপি, মুলা, বাঁধাকপি, পটল, শিম, টমেটো, করলা, বেগুন ও লাউসহ অন্য সব শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষকেরা।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুরের চাঁদকরিম এলাকার কৃষক বাদল মিয়া বলেন, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। তবে মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। এ কারণে আমরা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছি। আমি নিজেই প্রায় ২০-২৫ বছর থেকে আগাম শাক-সবজি চাষ করে আসছি। আগাম শাক-সবজি চাষ করলে বেশি দামে বাজার জাত করা যায়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর এলাকার কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, সবজি চাষ করে আমার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। আমরা এখন স্বাবলম্বী। এখন আমাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। ক্ষেত থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। দামও ভালো পাওয়া যায়। আমি শীত কালিন প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি চাষ করি।
সদর উপজেলার কৃষক কাসেম ব্যাপারী বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ১ বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। সবজি চাষে সব মিলিয়ে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজার চড়া এবং দাম ভালো পেলে ৮০-৮৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি করা যাবে। বর্তমানে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি।
ফুলছড়ি উপজেলার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি কাজ করেই আমার সংসার চলে। আপাতত লাউ, শিম চাষ করেছি। বৃষ্টির কারণে বাকি সবজি গুলো চাষ করতে পারি নি। আকাশ ভালো থাকলে দুই একদিনের মধ্যেই বাকি সবজির চারা রোপন করবো।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, জেলায় আগাম শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। কৃষিবিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। জেলায় শাক-সবজি চাষে কি ভাবে বৃদ্ধি করা যায় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে লক্ষ্যে পরামর্শের পাশা পাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। ২২ হেক্টর জমির কৃষকদের ক্ষতি হওয়ায় আগামী সপ্তাহ থেকে প্রণোদনা দেয়া হবে তাদের।