”সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি আমার হাঁস মুরগী ও রান্না ঘর ভেঙে গেছে বাড়িত মানুষ নাই, তাই গ্রামবাশীকে ডাকতে গেছি আমার থ্যাকার ঘর সরানোর জন্য এলাকাবাসীসহ আইসা দেখি আমার একমাত্র থাকার ঘর টাও নাই, নদীর পানিতে গাছ পালার পাতা দেখা যায় বলে চিৎকার কান্না কাঁদতে শুরু করলেন রহিমা খাতুন ( ৫০)।
রাতের মধ্যেই সব শেষ হয়ে কোন মতে থাকার ঘরটা সরাইতে পারছি, নলকূপ পর্যন্ত সরাইতে পারি নাই। গতকালও আমা বাড়ি ছিল আর আজ আমি রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছি এভাবেই বলছিল ছবেদা খাতুন (৫৫) রহিমা ও ছবেদার মতো প্রায় অর্ধ শতাধিক ঘর বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের আবাদি জমি এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এসব অঞ্চলের মানুষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোদালকাটি ইউনিয়ন এর, পাকান্টারী ও সাজাই গ্রামে ব্যাপক নদী ভাংগন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কোদালকাটি বাজার, কয়েকটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বাড়ি ঘর,নদী ভাংগনের হুমকির সম্মুখীন। গত সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে পানি বাড়াছে আর পানি বাড়ার সাথে সাথে এবছরও ভাঙ্গনের তীব্রতা শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে। হুমকিতে রয়েছে এই ইউনিয়নের সবচেয়ে পুরাতন বিদ্যাপিঠ বদরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালকাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাদাকাত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, কোদালকাটি বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ প্রায় ২০টি সরকারী বেসরকারী স্থাপনা।
গত এক সপ্ত ৫০ টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছ। অনেকেই ভিটে-মাটি হারিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। যাদের যাওয়ার জায়গা নেই, তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ ভিটে-মাটি আঁকড়ে রয়েছেন।
ভাঙনকবলিত এসব এলাকার অনেকেই জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার নদীতে ভেঙেছে তাদের বাড়ি-ঘর-ভিটে-মাটি। এবার ভেঙে গেলে নতুন করে আর বাড়ি-ঘর তৈরি করতে পারবেন না। পাইকান্টারি গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ওহাব আলী বলেন, এই জীবনে নয় বার বাড়ি ভাংছি ভাঙতে ভাঙতে নদী বাড়ির কাছে চইলা আইছে। এখন যে কোনো সময় সবকিছু নদীতে চাইলা যাইব। বউ-পোলাপান নিয়া কই যামু কি খমু বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
কোদালকাটি বাজার পাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নজর ভনু বলেন, কামলা (দিন মজুরি) দিয়ে সামান্য যে কয়টাকা পায় তাই দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। সব সময় কামলা চলে না। আমরা কিভাবে যে বাইচা আছি আল্লাহই ভালো জানে! এখন বাড়ি-ঘর যদি নদীতে চইলা যায়, তাইলে থাকমু কই? চরসাজাই মন্ডল পাড়া গ্রামের আমিনুল মাষ্টার বলেন, দ্রুত জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হোক সেই সাথে স্থানীয় সমাধান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানায়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নুরুল আমিন বলেন বার বার তালিকা করে দিয়েছি কোন প্রকার সহযোগিতা করে না প্রশাসন থেকে ৫০ টা বাড়ি ভেঙে গেছে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। কার কাছে বলবো প্লিজ দেখেন এই অসহায় মানুষ গুলোকে। যাদের বাড়ি ভেঙেছে এখন পর্যন্ত কেন সহায়তা পায়নি জানতে চাইলে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের তালিকা করতে দিয়েছি। তালিকা করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মিটিংয়ে আলোচনা করে প্রোয়জনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামের ফোনে বার বার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।