
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্ভিস আলম বলেছেন, আমরা যদি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে চাই, তাহলে যেই রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক না কেন, যে ছাত্ররা অদ্ভুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের প্রতি এতটুকু শ্রদ্ধা সকল রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গের থাকা উচিত। আমি বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে বিএনপি তাদের জায়গা থেকে আরো বেশি দায়িত্ব পালন করবে। কারণ তারা বড় দল, তাদের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্কে মাশরুম ও মুক্তা চাষ প্রকল্পের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি নেতা দুদুর এক বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য, তার দলের বা বিএনপির বক্তব্য নয়। তারা রাজনীতিতে আমাদের সিনিয়র, তাদেরকে দেখে আমরা শিখব, সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কিন্তু তারা যদি বয়সের দিক থেকে যারা অনুজ, তাদের সামনে রেখে প্রতিহিংসামূলক বা ছোট করে কথা বলার যে কালচার, সেটা যদি আবার তৈরি হয়, যেটা আমরা দেখতাম শেখ হাসিনা ডক্টর ইউনুসকে নিয়ে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ছোট করে কথা বলতেন। এটা রাজনৈতিক সৌহার্দ্য নষ্ট করে ফেলেছিল। আমরা একই কালচার তাদের কাছে দেখতে চাই না।
আমাদের জন্য তাদের কাছে যদি কোন পরামর্শ থাকে, এই পরামর্শ দেওয়ার একটা সুন্দর সম্পর্কের মধ্য থেকে দেওয়া উচিত। আমরা সেটাই প্রত্যাশা করব। ছাত্র আন্দোলনের কারণে শিক্ষার একটি সুস্থ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এটি আসলে ঠিক না। পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। আমরা শেষ হয়ে গিয়েছি, নষ্ট হয়ে গিয়েছি, এই কথাটা আমরা বলতে পারিনা। ছাত্র জনতার এতবড় ত্যাগ, এতবড় একটি অদ্ভুত্থান। আর এই মানুষগুলা এখন এভাবে মিডিয়ার সামনে বুক ফুলিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলছেন। কিছুটা হলেও পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। কিন্তু এতবড় ত্যাগ এই ত্যাগ শুধুমাত্র তাদের ত্যাগ নয়, পুরো বাংলাদেশের।
ভারতের ট্রান্সসিপম্যান্ট চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুটি পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ। কখনো এই দুটি দেশের সম্পর্ক এমন হয়ে যাবে না, যে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। আমরা এটা প্রত্যাশা করিনা। ভারতের কাজ, ভারত কিভাবে বাংলাদেশকে ডিল করছে, কোন চোখে দেখছে, এই জিনিসগুলি ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নির্ধারণ করবে। কোন কিছুই কখনো থেমে থাকে না। আমাদেরকে কেউ যদি অনৈতিক বা অযৌক্তিকভাবে কোন একটি সুবিধা বঞ্চিত করে, দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার অপশন খুঁজে নেবে। সব কিছুরই কোন না কিছু বিকল্প একটি অপশন রয়েছে। এমন করে বড় বড় পরাশক্তি অনেককেই চেপে ধরার চেষ্টা করেছে। সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনশেষে ওই ছোট ছোট শক্তিগুলো আরো অসংখ্য বিকল্প পথের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়েছে। আমরা মনে করি শুধু ভারত নয়, এক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোনো দেশ যদি বিভিন্ন বাণিজ্যিক চুক্তি বা সুযোগ সুবিধার জায়গায় আমাদেরকে চেপে ধরার চেষ্টা করে, গোটা বিশ্ব আমাদের জন্য খালি রয়েছে। আমরা বিশ্বের অন্য জায়গায়, যেখানে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে, সেই সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের সুন্দর একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক করতে পারব। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত রাজনৈতিক দল হিসেবে নয় বরং একটি দেশ হিসেবে ফাংশন করবে এবং দেশ হিসেবে আরেক দেশের সাথে তার বানিজ্যিক চুক্তিগুলো করবে।
এর আগে, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসন ইকোপার্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ব্যবস্থাপনায় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকায় ইকোপার্ক চত্বরে দুইদিন ব্যাপী মাশরুম ও মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় জেলা প্রশাসক সাবেত আলীর সভাপতিত্বে জেলা বিএনপির আহবায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, জেলা জজ কোর্টের পিপি আদম সুফী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মশালায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় ৫৪ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ নিয়েছেন। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন ড. নজরুল ইসলাম।
Related