মামলার বাদী মো. আতোয়ার হোসেন (৪৫) গাইবান্ধা জেলা সদরের খোলাহাটি কুমারপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তিনি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং (স্টেন্ট) স্থাপন করে তিনটির টাকা নেওয়াসহ রোগীকে ‘অতঙ্কিত’ করে রিং স্থাপনে উৎসাহিত করার অভিযোগ এনেছেন। চিকিৎসক হিসেবে রিং বিক্রির নিয়ম না থাকলেও ডা. মাহবুবুর রহমান নিজেই রিং বাণিজ্য করেন বলেও মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
আতোয়ার রহমান এজাহারে বলেছেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর রহমান প্রতারণার মাধ্যমে তার হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং (স্টেন্ট) পরিয়ে তিনটি রিংয়ের টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেছেন। ডা. মাহবুবুর রহমান রিং পরানোর যে সিডি দিয়েছেন তাতে রিং লাগানোর কোনো নজির নেই তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় একটা রিং পরানোর রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু ডা. মাহবুবুর তিনটি রিং লাগোনোর কথা বলে আমার নিকট থেকে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর হার্ট অ্যাটাক হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. মাহবুবুর রহমানের অধীনে ভর্তি হন তিনি। এনজিওগ্রাম করে ডা. মাহবুবুর জানান যে, হার্টের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক আছে এজন্য পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। এর পর ৯ শতক জমি বিক্রি তিনটি রিংয়ের জন্য মেডিকেলের এমএলএস শহিদুল ইসলামের সহায়তায় তিন লাখ ২০ হাজার টাকায় তিনটি রিং পরাতে রাজি হন ডা. মাহাবুবুর। রিং পরানোর পর অবস্থার উন্নতি না হলে কয়েকদফা ওই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ডা. মাহাবুবুরের অধীনে। এরপরও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলে আতোয়ার গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হয়ে সুস্থ হন। এ সময় জানতে পারেন তার হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং পরানো হয়েছে।
এর আগে, আতোয়ার রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ডা. মাহবুবুর রহমানের ‘প্রতারণা ও রিং বাণিজ্যের’ বিরুদ্ধে হাসপাতাল পরিচালক, সিভিল সার্জন, দুদকসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
‘চিকিৎসক হয়ে হার্টের রিং (স্টেন্ট) বিক্রি করেন, হার্টের রক্তনালীতে একটি রিং পরিয়ে তিনটির টাকা নেন, রক্তনালীতে ব্লক না থাকলেও ব্লক আছে বলে অতঙ্কিত করে তোলেন’- এমন সব অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হতেই চিকিৎসক মো. মাহবুবুর রহমান বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির মাধ্যমে অভিযোগ তুলে নিতে ‘চাপ ও হুমকি’ দিচ্ছেন বলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান।
ভুক্তভোগী আতোয়ার রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, হার্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি ওই চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে তাকে কষ্টে দিনানিপাত করতে হচ্ছে। মাহবুবুর রহমান আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন লোকজনকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শেষ পর্যন্ত ন্যাযবিচার পাওয়ার আশায় আদালতের দারস্ত হয়েছি।
এদিকে, ডা. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে রিং বিক্রি ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর ছয়টি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি অভিযোগ করা হয়েছে দুনীতি দমন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি, রমেক হাসপাতাল, রংপুর সিভিল সার্জন অফিসে।
তবে এসব অভিযোগ শুরু থেকে অস্বীকার করে আসছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান।
উল্লেখ্য; গত বছর ডা. মাহবুবুর রহমানের ‘রিং বাণিজ্য’ নিয়ে দৈনিক সকালের বাণীতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।