দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অত্যাধিক তাপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ করে দিলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। হিট স্ট্রোকের ফলে ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
১. শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া
২. গরমে অচেতন হয়ে যাওয়া
৩. মাথা ঘোরা
৪. তীব্র মাথা ব্যথা
৫. ঘাম কমে যাওয়া
৬. ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া
৭. শারীরিক দুর্বলতা ও পেশিতে টান অনুভব করা
৮. বমি হওয়া
৯. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
১০. শ্বাস কষ্ট
১১. মানসিক বিভ্রম
১২. খিঁচুনি
হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা
কারো হিটস্ট্রোক হলে বা অচেতন হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো:
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলতে হবে।
রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে হবে।
শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বগল, ঘাড়, পিঠ ও কুচকিতে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে।
তবে কিছু সহজ পদক্ষেপ মেনে চললে গরমে সুস্থ ও সজীব থাকা সম্ভব। এখানে কিছু কার্যকরী উপায় দেওয়া হলো যা গরমে আপনাকে সহায়তা করবে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গরমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। তাই পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। শরীর হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করলে গরমের প্রভাব কমে আসে এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করা যায়।
হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন
গরমে হালকা রঙের, পাতলা এবং আরামদায়ক কাপড় পরা উচিত। এই ধরনের কাপড় শরীরের তাপ শোষণ করে কমাতে সহায়তা করে এবং ঘামের পরিমাণও কমিয়ে আনে।
গরমের সময় বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করুন
বিশেষ করে দুপুরে, যখন সূর্যের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে, তখন বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে বাহিরে বের হলে হালকা কাপড় পরুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
শরীর ঠান্ডা রাখতে কিছু কৌশল অনুসরণ করুন
ঠান্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে দিতে পারেন, এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফ্যান বা এসি ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন
গরমে হালকা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই ভালো। শসা, তরমুজ, দই, ফলমূল, শাকসবজি এবং জুস শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিন
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা একটিভিটি গরমে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। কাজেই হালকা ও কম পরিশ্রমী কাজগুলো করুন এবং বিশ্রাম নিন।
কফি বা অ্যালকোহল পরিহার করুন
গরমে কফি বা অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে, তাই এগুলো পরিহার করা উচিত।
বিশ্রাম ও ঘুম
গরমে বেশি কাজ করার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম জরুরি। এটি আপনার শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করবে।
গরমে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার জন্য কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে শরীরকে ঠান্ডা রাখা সম্ভব। পানি পান করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সুষম খাবার খাওয়া গরমের প্রভাব থেকে বাঁচতে অত্যন্ত কার্যকরী। এইসব উপায় অনুসরণ করলে গরমে সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।