শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করেছে রংপুরের কাউনিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান। হুইলচেয়ারে বসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এবার পেয়েছে জিপিএ– ৫। তার এই সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। মাহামুদুর রহমান নিহাদ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঘোপাতী গ্রামের দরিদ্র মুরগি বিক্রেতা আব্দুল হান্নান মিয়ার ছেলে।
জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও কখনো মনোবল হারাননি সে। পরিবারের উৎসাহ ও নিজের দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে গেছে।চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় সে কাউনিয়া কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে হুইলচেয়ারে বসেই পরীক্ষা দেয়। অসাধারণ ফলাফল করে জিপিএ–৫ অর্জন করে সবার নজর কাড়ে। এর আগে, ২০২৩ সালে খোপাতি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ–৫ পেয়েছিল সে। মাহামুদুর রহমান নিহাদ জানায়, “আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার। প্রতিবন্ধকতা আমার জীবনের বাধা নয়। আমি চাই সমাজের সেবা করতে এবং প্রমাণ করতে শারীরিক সীমাবদ্ধতা কখনোই যোগ্যতার সীমা নয়।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আমার অনুপ্রেরণার উৎস।
তাঁর অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস দিয়েছে। পাশাপাশি, কাউনিয়া কলেজের শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে পড়াশোনায় সহায়তা করেছেন।” মাহামুদুর রহমান নিহাদের মা বলেন,ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। আমরা ভেবেছিলাম তার পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া কঠিন হবে, কিন্তু সে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছে। এখন শুধু চাই, সরকার তার পাশে দাঁড়াক।” তার বাবা আব্দুল হান্নান মিয়া জানান, “আমরা গরিব মানুষ, কিন্তু ছেলের ইচ্ছাশক্তি অনেক বড়। তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি সহায়তা পেলে সে আরও এগিয়ে যাবে। দেশবাসীর কাছে আমি আমার ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য দোয়া ও আর্থিক সহযোগিতা চাই।”
কাউনিয়া কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আযম বলেন,মাহামুদুর রহমান নিহাদের এই অর্জন পুরো প্রতিষ্ঠানের গর্ব। সে অধ্যবসায়ী, ভদ্র ও পরিশ্রমী। সঠিক সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে সে বড় কিছু করবে।” এলাকাবাসী ও সহপাঠীরা মাহামুদুর রহমান নিহাদের সাফল্যে গর্বিত। তারা চান, সরকার বা কোনো সামাজিক সংগঠন যেন তার উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তার দায়িত্ব নেয়। প্রতিবন্ধী হয়েও যে দৃঢ় মনোবল, অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সাফল্য ধরা যায় মাহমুদুর রহমান তারই জীবন্ত উদাহরণ। তার গল্প প্রমাণ করে “শরীর নয়, মনই আসল শক্তি।”