মেহেরপুর জেলার পতিত ও অনাবাদি জমিতে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে অনেক কৃষকের। শুধু লতি নয়, কচুর ফুল ও কন্দ অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিধায় দেশজুড়ে এর চাহিদা বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, অনাবাদি, পতিত ও স্যাঁতসেঁতে জমিতে অন্য কোনো আবাদ না হওয়ায় লতিকচুর ফলন ভালো হচ্ছে। অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এটির চাষ শুরু করেছেন। চাষের পদ্ধতি জানাতে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।
২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ শুরু হয়। পরীক্ষামূলক চাষ করে লাভবান হওয়ায় এখন অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষ করছেন। মেহেরপুর জেলা শহরের দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া ২৪ কাঠা অনাবাদি জমিতে লতিকচুর চাষ করেছেন। চারা রোপণের তিন মাস পর লতি বিক্রি শুরু করেছেন। লতি বিক্রির পাশাপাশি ফুলও বিক্রি করছেন। স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০২১ সালে প্রথমে তিনি ১০ কাঠা জমিতে লতিকচুর চাষ করেন। ফলনও ভালো পান। খরচের দ্বিগুণ লাভ উঠে আসে।
এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে লতিকচুর আবাদ করেছেন। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পরপর কচুর লতি তোলা হচ্ছে। এক মাস পরপর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হবে। ইতোমধ্যে তিনি ৬০ হাজার টাকার লতি ও ফুল বিক্রি করেছেন। আরও ৬০ হাজার টাকার বিক্রির আশা করছেন বাবু মিয়া।
চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, সবসময় পানি দিয়ে জমি স্যাঁতসেঁতে করে রাখতে হয়। এর বাইরে তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন হয় না।
কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন। মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক বিঘা জমিতে লতিকচুর চাষ করে ইতোমধ্যে অর্ধ লক্ষ টাকার লতি বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও লাখ টাকার লতি, মুখি ও ফুল বিক্রি করবেন। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করতে খরচ হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। তিন মাসের মধ্যেই লতি বিক্রি শুরু হয়। পরে ফুল ও কন্দ বিক্রি হয়। একইসঙ্গে তিনটি সবজি পাওয়ায় লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই। অল্প খরচেই বেশি লাভ পাওয়া যায়।
মেহেরপুরের সবজিবিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। লতিকচুর পাইকারি ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়তদার সামাদ আলী, রাজ্জাক ও ইনতাজ জানান, লতিকচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুরের চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে এ সবজি পাঠানো হয়।
জেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, মেহেরপুরে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতিকচু চাষ সেভাবে হতো না। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করেন। সফলও হন তিনি। পরে অনেকে এটি চাষে অনুপ্রাণিত হন। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। এ জাতের লতিকচু ঘন করে লাগাতে হয়। সবসময় জমিতে পানি রাখতে হয়। এটি করতে পারলে লতি ও ফুল বেশি পাওয়া যায়।
জেলায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে লতিকচুর আবাদ হয়েছে। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় এটি পাঠাচ্ছেন। স্বল্প সময়ে উৎপাদন এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা দিনদিন এ সবজি চাষে ঝুঁকছেন।