গত ৪ আগষ্ট জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিলো। সেই দিন আন্দোলনকারী ও পুলিশের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটেছে। বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন সনজু মিয়া (২২)। পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কার্যালয় সামনে আন্দোলন করছে ছাত্র-জনতা। সনজু মিয়া একটি ওয়ার্কশপে দোকানে শ্রমিকের কাজ করে। কাজে যাওয়ার পথে আন্দোলনের মিছিলে পড়ে সনজু মিয়া। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে পুলিশ রাবার বুলেট, কাদনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। হঠাৎ করে রাবার বুলেটের তিনটি গুলি এসে সনজু মিয়ার বাম চোখে লাগে। পরে সনজু মিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পড়ে।
পুলিশের গুলিতে চোখ হারাতে বসেছে আমার ছেলে। অভাবের সংসারে ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছি প্রায় ২২ দিন। সনজুর তো আর কামাই (আয়) করতে পারছে না। প্রতিবেশি ও এক জামাইয়ের কাজ থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকা নিয়ে চিকিৎসা করেছি। টাকার জন্য পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছেন। চিকিৎসার টাকাই জোগাড় করতে পারছি না, ধারদেনা শোধ করবো কিভাবে? আমাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সনজু। এখন সে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে। চিকিৎসার জন্য আরও টাকা প্রয়োজন কিন্তু টাকার অভাবে উন্নতমানের চিকিৎসা করাতে পারছি না। এখন আমাদের মরন (মৃত্যু) ছাড়া কোনো উপায় নেই।
বুধবার এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার সনজু মিয়ার মা মঞ্জুরানি বেগম। তিনি বলেন, আমার ছেলেটা সেদিন সড়কের ওপর পড়েছিল। পরে ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে ওই দিন রাতে রংপুর চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় বাংলাদেশ আই হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক সনজুর চোখ থেকে একটি রাবার বুলেট গুলি বের করে। এখন বাকি আরও দুটি বুলেট চোখের ভেতরে আছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তারপরেও উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে।
সনজু’র মা আরও বলেন, আমি শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়ার কাজ করি। ছেলের আয় ও আমার ইনকামের টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছিল। ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশির কাছ থেকে অনেক টাকা ধার করছি। এসব টাকা কিভাবে শোধ করবো। জমিজমাও নাই। আবার চোখের চিকিৎসাও চালাতে হবে। এজন্য অনেক টাকা লাগবে। আমি সনজুর জন্য বিত্তবান ব্যক্তি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করছি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেজে, সনজু মিয়া গরিব পরিবারের সন্তান। অসুস্থ্য বাবা ও তিন ভাই নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তাদের। টাকার অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছে না তারা। সনজুর চিকিৎসার জন্য সবার কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
সনজু মিয়া বলেন, আমার জীবনটাই শেষ। চোখের আলো নিভে গেছে আমার। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। সেখান থেকে একটু সুস্থ্য হয়ে বাড়ি চলে এসেছি। তবে আমার চোখ পুরোপুরি ভালো করার জন্য আরও কয়েকবার অপারেশন করতে হবে। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। টাকা সংগ্রহ না হলে হয়তো চিরতরে চোখ হারাতে হবে আমাকে। তাই আমার চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। যাতে আমি আবার চোখের আলো ফিরে পাই। সনজুর বাবা বাবা ইয়াসিন মিয়া বলেন, ওর আয় দিয়েই আমাদের পরিবারটা চলতো। কিন্তু এখন সে অসুস্থ্য। এখন আমরা কেমনে চলবো বুঝতে পারছি না। সমাজের বিত্তবানদের অনুরোধ করছি, তারা যেন আমাদের সহায়তা করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একজন ৩ হাজার ও একজন ২ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে।