ভক্তরা তাদের পরলোকগত মা-বাবা সহ পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনায় মাথা মুন্ডন করে তর্পনাদি ও গঙ্গাস্নান সেরে সমবেত হন মন্দির প্রাঙ্গনে। সেখানে পূজার্চনা ও মন্দির পরিক্রমায় নামে হাজার হাজার ভক্তদের ঢল। উৎসব উপলক্ষে থাকে মাতৃপূজা, চন্ডীপাঠ, গীতাপাঠ, ধর্মসভা, মাতৃবন্দনা ও প্রার্থনা সঙ্গীতের আয়োজন।
তবে গত বছরের তুলনায় কমেছে পূর্ণার্থীর সংখ্যা। নৌকা ডুবির পর থেকেই কমতে থাকে ভক্তদের সমাগত। এবার করতোয়া নদী পারপারে আউলিয়ার ঘাটে চারটি নৌকা রাখা হয়েছে। তিনটি চলাচল করছে ও একটি রিজার্ভ রাখা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ি এলাকার ভক্ত অনীল কুমার বলেন, এবার স্ত্রীকে নিয়ে মন্দিরে পূজা করতে এসেছি। তবে নৌকা ডুবির ঘটনা থেকে ভয়ে এবার দীর্ঘ পথ ঘুরে সড়ক দিয়ে এসেছি। তবে গতবারের চেয়ে এবার ভক্তের সংখ্যা কম। সেতু হলে হয়তো বাড়তে পারে।
পঞ্চগড়ের সাকোয়া এলাকার প্রবীর রায় বলেন, নৌকা দিয়ে নদী পর হয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে আসলাম। এবার নৌকাকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ওঠানো হচ্ছে না। কিন্তু নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট রাখা হয়নি।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, উৎসব উপলক্ষে মন্দিরে আগত ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবার রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে করতোয়া নদীর দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও তৎপর আছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এছাড়াও নদীর ঘাট থেকে শুরু করে মন্দির পর্যন্ত নিরাপত্তা ও সেবা প্রদানের জন্য বিএনপির ১শ’, জামায়াতে ইসলামীর ১শ’, মন্দির কমিটির ১শ’ এবং ছাত্র সংগঠন ‘আলোর পথে বাংলাদেশ’র ১শ’ স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।
বদেশ্বরী মন্দির কমিটির সভাপতি নীতিশ কুমার মুকুল বকসী বলেন, সকাল থেকে ভক্তরা মন্দিরে আসছে। তবে পূজা করে এক ঘন্টার মধ্যে সবাই চলে যাচ্ছেন। কেউই দেরি করছেন না। তবে এবার ভক্তের সংখ্যা কমেছে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা এবার সর্বাধিক নিরাপত্তা জোরদার করেছি। সার্বক্ষনিক পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশ, সেচ্ছাসেবক সহ আমরা প্রশাসনের লোকজন রয়েছি। এছাড়া জেলা পরিষদের লোকজনও রয়েছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে বেশি মানুস না উঠাতে। এছাড়া মন্দির এলাকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সনাতন ধর্মালম্বীদের মহালয়া উৎসব উপলক্ষে বদেশ্বরী মন্দিরে যোগ দিতে গিয়ে এই করোতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৈৗকাডুবির ঘটনায় হারিয়ে যায় নারী, বৃদ্ধ ও শিশু সহ বিভিন্ন বয়সী ৭২টি তাজা প্রাণ।