তৃতীয় লিঙ্গ, চলার পথে বা পাবলিক বাসে তাদেরকে দেখলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। কেউ ভয় পান কেউবা আবার বিরক্তি প্রকাশ করেন। ঝামেলা এড়াতে অনেকে তাঁদের চটজলদি টাকা দিয়ে কেটে পড়েন। টাকা দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের সঙ্গে কারও কারও রীতিমতো ঝগড়াবিবাদও লেগে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাকা চেয়ে বা জোর করে আদায় করে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা যায় তাদের । তাদের এমন আচরনের কারনে সাধারণ মানুষের কাছে তারা অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার। তাই বৈষম্য দূর করতে ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে নভেম্বরে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন সরকার।
হিজড়া সম্প্রদায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ। আবহমানকাল থেকেই এ জনগোষ্ঠী অবহেলিত ও অনগ্রসর। এ লক্ষ্যে এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের জন্য সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, তাদের পারিবারিক, আর্থসামাজিক, শিক্ষা ব্যবস্থা, বাসস্থান, জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সর্বোপরি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় এনে দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সম্পৃক্তকরণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন শুরু করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২১ টি জেলায় তা সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ৬৪টি জেলায় হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতা, শিক্ষা উপবৃত্তি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। প্রতিবছরই এ কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
সমাজসেবা অধিদফতরের প্রাথমিক জরিপ মতে বাংলাদেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। ২০১৪ সালে ২২ জানুয়ারী বাংলাদেশ সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর হতে এ কর্মসূচির ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির নগদ সহায়তায় জিটুপি পদ্ধতিতে উপকারভোগীর মোবাইল হিসাবে প্রেরণ করা হয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপমতে হিজড়াদের সংখ্যা ১২,৬২৯ জন।
তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন কিংবা কর্মে তাদের সরব উপস্থিতি তেমন একটা চোখে না পরলেও ভোটের মাঠে তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মত। আওয়ামীলীগ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের দেখা যায় ভোটের মাঠে, কিন্তু নিবাচনের অপ্রতাশিত ফলাফলের পর তাদের আর দেখা যায়নি।
তবে বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোথায় ছিলেন এই তৃতীয় শ্রেনীর মানুষ এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘোরপাক খাচ্ছে।