ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হওয়ায় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট চার শতাধিক শ্রমিক।ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভুটান থেকে আমদানি করা পাথরের ট্রাকগুলো স্লট বুকিংয়ের (অনলাইনে ফি দিয়ে নিবন্ধন) আওতায় আনতে ভারতের ফুলবাড়ী বন্দরে ট্রাকচালকদের আন্দোলন চলছে। এ কারণে টানা পাঁচ দিন ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ। আর স্থলবন্দরে শ্রমিকদের পাথর খালাসের (আনলোড) খরচ ও ভারতের অভ্যন্তরে পাথরের ট্রাক ভাড়া সংক্রান্ত জটিলতায় গত ১৮ নভেম্বর হতে সেখান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমদানিকারকেরা বিপাকে পড়েছেন। সেই সঙ্গে শ্রমিকেরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এককথায় পুরো স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধের প্রভাব পড়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, এ স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়, তার ৯৫ শতাংশই পাথর। স্বাভাবিক সময়ে ভারত ও ভুটান থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩৫০টি ট্রাকে পাথর আমদানি হয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত টানা ৫ দিন ভুটান থেকে এবং টানা ৫২ দিন ভারত থেকে পাথর আমদানি হয়নি। তবে ভারত ও নেপাল থেকে স্বল্প পরিসরে চা প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রাংশ, চিটাগুড়, আদা ও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট, গ্লাস, ওষুধ, ব্যাটারি, খাদ্যপণ্য, টিস্যু পেপারসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত ও নেপালে রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমাদের বন্দরটা সম্পূর্ণ পাথর আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ভারতের সঙ্গে যে সমস্যা ছিল, সেটি সমাধান হয়েছে। কিন্তু এখন ভারতে ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের কারণে ভারত-ভুটান দুই দেশেরই পাথর আসছে না। এ জন্য বেশ কয়েক দিন ধরে পাথর আমদানি না হওয়ায় বন্দরে কাজ কমে গেছে। আমাদের শ্রমিকেরা বিপদে পড়েছেন। আয়রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রমিকদের কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার থেকে ভারতের ফুলবাড়ী বন্দরে ভুটানি ট্রাকগুলোকে স্লট বুকিংয়ের আওতায় আনতে আন্দোলন শুরু করে সেখানকার ‘লোকাল ট্রাক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এতে শনিবার থেকে ভুটানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পাথর রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। সবশেষ ২ জানুয়ারি এই বন্দরে ভুটান থেকে ১৬৫টি ট্রাকে ৪ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন পাথর আমদানি হয়েছিল।
আমদানিকারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভুটানের পাথর গুণগত মানে অনেক ভালো। ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় তাঁরা ভুটান থেকে পাথর আমদানি করছিলেন। কিন্তু ভুটানের ট্রাক স্লট বুকিংয়ের আওতায় আনতে ভারতীয় ট্রাকচালক-মালিকদের আন্দোলনের কারণে এখন ভুটান থেকেও পাথর আমদানি বন্ধ। ভুটানের পাথর আনতে আমদানিকারকদের এলসি করা আছে। এমনকি দেশটির বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা অর্ডারও নিয়েছেন। কিন্তু পাথর আমদানি করতে না পারায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বন্দরে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর বন্দরের ভেতরের শ্রমিকদের পাশাপাশি বাইরের শ্রমিকেরাও বিপাকে পড়েছেন। তবে স্বল্প পরিসরে চা প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রাংশ, চিটাগুড়, আদা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হচ্ছে।
Related