অবৈধ দখলদার ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এরপরই এই হামলার জবাব দিতে পরিকল্পনা সাজায় তেহরান। তবে ইসরায়েল হুমকি দিয়েছে, যদি তাদের ওপর ইরান কোনো ধরনের হামলা চালায় তাহলে তারাও ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে।
ইরান ও ইসরায়েলের এমন পাল্টাপাল্টি হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ ইরান যেমন সামরিকভাবে শক্তিশালী। ঠিক একইভাবে ইসরায়েলও এক্ষেত্রে বেশি শক্তিশালী।
সামরিক দিক দিয়ে ইসরায়েল কতটা শক্তিশালী
প্রতিরক্ষা তথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স’ গত বছর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বিশ্বের শক্তিশালী ২০টি দেশের অন্যতম একটি। ওই সময় তারা জানিয়েছিল, ইসরায়েলের ২৪১টি যুদ্ধবিমান, ৪৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার এবং ২ হাজার ২০০ ট্যাংক রয়েছে।
যুদ্ধবিমানের মধ্যে রয়েছে এফ-৩৫। যেটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক রণ বিমান। এছাড়া ইসরায়েলের রয়েছে ১ হাজার ২০০টি কামান ইউনিট। যার মধ্যে রয়েছে ৩০০টি এমএলআরএস।
দখলদার ইসরায়েলের কাছে আরও রয়েছে সাতটি যুদ্ধজাহাজ এবং ছয়টি অ্যাটাক সাবমেরিন। এরমধ্যে রয়েছে আইএনএস ড্রাকন নামের একটি সাবমেরিন। যেটি দিয়ে পারমাণবিক হামলা চালানো যাবে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় যে সামরিক শক্তি, সেটি হলো আয়রন ডোম। এটি একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আয়রন ডোমে ১০টি ব্যাটারি থাকে। যেগুলোর প্রত্যেকটিতে থাকতে চারটি লঞ্চার। একটি ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্থাপন করা যায়। আর এমন একটি ব্যাটারি দিয়ে অন্তত ৬০ কিলোমিটার অঞ্চল রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য বস্তু আটকে দিতে সক্ষম।
ইরানের সামরিক শক্তি কেমন
বিশ্বের অন্যতম সামরিক শক্তিধর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইরানকে। দেশটি বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরির ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো দেশের এগিয়ে আছে। ইরান মূলত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের দিকেই সবচেয়ে বেশি মনযোগ দিয়েছে।
এছাড়া ইরানের রয়েছে স্পিডবোডের বিশাল বহর এবং ছোট ছোট সাবমেরিন। এসব স্পিডবোড এবং সাবমেরিন ব্যবহার করে তারা পারস্য উপসাগর এবং হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমনকি বিশালাকৃতির জাহাজ জব্দ করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর চেয়ে ইরানের কাছে সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ক্রুজ ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের কাছে যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে সেগুলো ২ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান সবচেয়ে বেশি শক্তি সঞ্চার করছে ড্রোনের দিক দিয়ে। তাদের কাছে এমনও ড্রোন আছে যেগুলো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। আর এসব ড্রোনের বিশেষত্ব হলো এগুলো খুবই নিচ দিয়ে উড়তে পারে। ফলে এসব ড্রোন রাডারে ধরা পড়ে না।
ইরান তাদের ড্রোনগুলো মাটির নিচে অথবা পাহাড়ের ভেতর সুড়ঙ্গ তৈরি করে সংরক্ষিত করে রাখে। এছাড়া এসব ড্রোন ঘাঁটির কাছে থাকে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান নিজেদের প্রযুক্তিতে এসব ড্রোন তৈরি করে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে তারা রাশিয়া এবং সুদানের কাছে এসব ড্রোন বিক্রিও করেছে।
তবে ইরানের আকাশ শক্তি খুবই কম। তাদের কাছে বর্তমানে যেসব যুদ্ধবিমান রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই সাবেক শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলেভির আমলের। অর্থাৎ এসব বিমান কেনা হয়েছিল ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে। তবে ইসলামিক বিপ্লবের পর ১৯৯০ সালের দিকে ইরান রাশিয়ার কাছ থেকে কিছু যুদ্ধবিমান কিনেছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
এছাড়া ইরানের ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যানগুলোও বেশ পুরোনো। ইরানের নৌবাহিনীর কাছে বর্তমানে দুটি বড় যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।