গাঢ় বেগুনী ও লালচে কালারের আকর্ষনীয় ললিতা বেগুন। হাইব্রিড জাতের ললিতা বেগুনটির বেগুনটি ফলন ও ভালো দাম থাকায় আগ্রহ বেড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কৃষকদের। স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেগুন যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের বিড়ালীজোত এলাকায় ক্ষেতে বেগুন তুলছিলেন চাষি খোরশেদ আলী। তার জমিতে কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম ও আলম নামের দুই দিন মজুর। গাঢ় লালচে কালারের বেগুনগুলো তুলে বাড়ির আঙিনায় জড়ো করছেন সে বেগুন। পাইকাররা এসে কিনে নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কার্যালয় জানায়, তেঁতুলিয়ায় উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বর্তমানে ৬০/৭০ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হচ্ছে। কৃষকরা নতুন করে বেগুনের চারা লাগাচ্ছেন। বেগুনগুলোর মধ্যে হাইব্রিড ললিতা অন্যতম। বেগুনটি উৎপাদন ও দাম ভালো হওয়ায় তেঁতুলিয়ার বেশ কয়েকজন চাষি আবাদ করছেন। অনেকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে দিন দিন। সামনের মৌসুমে এ বেগুনটি আরও আবাদ বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা-উপসহকারীরা।
জানা যায়, বেগুনটি সারা বছরই আবাদ করা যায়। বীজ বপনের পর চারা রোপনের ৬৫ থেকে ৭৫ দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত বৈশাখ-জৈষ্ঠমাসে বেগুন লাগানো হয়। বর্ষাকালে গাছে গাছে ফল আসে। গাছের প্রতিটি ফলের ওজন ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রায় তুলসি বা ঝিমিয়ে পড়া রোগ (ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট) সহনশীল ললিতা হাইব্রিজ জাতের বেগুন। অতি বৃষ্টিতেও তেমন একটা ক্ষতি হয় না।
দিনমজুর রফিকুল ও আলম জানান, আমরা খোরশেদ ভাইয়ের ক্ষেতে দিন হাজিরার কাজ করছি অনেক দিন থেকেই। এ এলাকায় ললিতা জাতের বেগুন আবাদ হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে ১২০০-১৩০০ টাকা মণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে কেজিতে ৩০/৩১ টাকা পাইকারি পরলেও এ বেগুন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০টাকার উপরে। এ অঞ্চলেই এ বেগুনটি আবাদ হচ্ছে। মাত্র ৩৫ শতক জমিতে লাগানো ক্ষেত থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০ মণের বেশি বেগুন তোলা হয়। তবে পোকার উপদ্রুব থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ক্ষেতে বেগুন নষ্ট হচ্ছে।
বেগুন চাষি খোরশেদ আলী বলেন, গাঢ় বেগুনী ও লালচে কালারের বেগুনটির নাম ললিতা। এটি হাইব্রিড জাতের। আবাদে ভালো ফলন হয়েছে। বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছি। কয়েকবার তুলে বিক্রি করেছি। বর্তমানে পাইকররা এসে ১২০০-১৩০০ টাকা মণ কিনে নিচ্ছে। ৩৫ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের ললিতা বেগুন লাগিয়েছি। আবাদে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তবে ইতিমধ্যে তিন লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করে ফেলেছি। প্রতি সপ্তাহেই ২০/২১ মণ বেগুন তুলতে পারছি। আশা করছি আগামী দুই আড়াই মাস বেগুন তুলতে পারবো। লাভবান হচ্ছি।
বেগুন পাইকারি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, চাষিদের কাছ থেকে মাঠ থেকেই বেগুন কিনছি আমরা। কৃষকরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছে, আমরাও তাদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে কিনে বিভিন্ন আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করে ব্যবসা হচ্ছে। আর বেগুনটি দেখতেও খুবই সুন্দর ও গুণগত মানের ভালো। বেগুনটি প্রথম প্রথম বাজারে উঠার সময় ২ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এখন সাড়ে ১২০০ টাকা দিচ্ছি। অন্য ফসলের চেয়ে ললিতা বেগুন চাষে খরচ ও পরিশ্র কম। ফলন ও দাম বেশি পাওয়া যায়। এতে চাষিরা লাভ বেশি হচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তামানা ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে দাম বেশি পাওয়ায় ললিতা বেগুনের আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। কারন এ বেগুনে পোকা কম ধরে।গুণগত মানেও এই বেগুন খুব ভালো। ভোক্তারও চাহিদা রয়েছে। চাষিদের ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সরকার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে করে যাচ্ছে।