আজ রোববার (১৩ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামে দেখা মিলল এই ব্যতিক্রমী দৃশ্যের। বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে চাল সংগ্রহে নেমেছে এলাকার শিশু-কিশোরেরা। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ঘুরে ঘুরে তারা চাল চাইছে রীতিমতো নাটুকে ঢঙে।
দলের সদস্য সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্ব জানায়, ‘আজ আমরা একটা গ্রাম ঘুরেই ৩০ কেজির মতো চাল পেয়েছি। বিকেলে যাব পাশের গ্রামে। সব মিলিয়ে ভালোই হবে।’ এই চাল বিক্রি করে তারা কিনবে মেলায় যাওয়ার খরচ—কেউ খাবেন রসগোল্লা, কেউ চড়বেন নাগরদোলায়, কেউবা পুতুলনাচ দেখবেন দাঁড়িয়ে।
এই শিশুদের দলে ছিল বাঁধন, প্রান্ত, কৃষ্ণা, হৃদয়সহ আরও কয়েকজন। প্রত্যেকের মনেই বৈশাখের উন্মাদনা।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে চাল দিচ্ছিলেন দামপাড়ার রাধারানী রায়। তিনি বলেন, ‘ওদের এভাবে দেখতে খুব ভালো লাগে।
ছোটরা এভাবে আনন্দ করলে আমাদের মনও ভালো হয়ে যায়।’ পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা শশী মন যোগ করলেন, ‘আমরাও ছোটবেলায় এমন করেই চাল তুলে মেলায় যেতাম। তখন মেলা মানেই ছিল গরম গরম জিলাপির ঘ্রাণ আর বাঁশির সুর।’
এই চাল সংগ্রহ ও মেলাকে ঘিরে গ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবের আবহ।
স্থানীয় রাজনীতিক কামরুল হাসান জানান, আগামীকাল সোমবার বেগুনবাড়ি গ্রামে বসবে বৈশাখী মেলা। তার আগেই শিশুরা নেমেছে ‘রাক্ষস অভিযানে’।
এই আনন্দের পেছনে আছে শতাব্দী পুরোনো একটি গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা। বেগুনবাড়ির প্রবীণ বাসিন্দা মহান্ত রায় বলেন, ‘আমার ছোটবেলাতেও এমন হতো। বৈশাখ এলেই ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে চাল তুলত। এটি আমাদের ঐতিহ্য।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন, ‘এই দৃশ্য দেখলে বোঝা যায়, আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি এখনও হারায়নি। শিশুরা এই নাটুকে কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে যে আনন্দ পায়, সেটাই ভবিষ্যতের সাংস্কৃতিক চর্চার ভিত গড়ে দেয়। এটি আমাদের মাটির ঘ্রাণ, আমাদের শিকড়ের টান।’