বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশারকে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারো ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়।
এ সমস্যায় চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের পাশাপাশি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন শুধু ওষুধ খেলেই রক্তচাপের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি মেলে না। এর জন্য সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের সঙ্গে প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট লিস্ট।
জীবনযাপনে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক উদ্বেগের ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বহু মানুষ। এই সমস্যা থেকে চটজলদি মুক্তি পেতে ভরসা রাখতে পারেন পাঁচ খাবারের ওপর।
কুমড়ার বীজ: অনেকেই কুমড়া খেলেও এর বীজ ফেলে দেন। কিন্তু বীজেও ভালো পুষ্টি রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিরা কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। এই বীজের ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। খারাপ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডও কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
টমেটো: টমেটোতে রয়েছে পটাশিয়াম ও ক্যারোটিনাইলয়েড পিগমেন্ট লাইকোপিন। এ উপাদান হৃদপিণ্ডের জন্য খুব ভালো। টমেটোতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যতালিকায় টমেটো রাখুন।
বিট রস: বিটের মতো উপকারী সবজি খুব কমই আছে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন বিট খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। ধমনী শিথিল রেখে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে বিটের রস। এতে রয়েছে নাইট্রেটস, যা রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গেলে ২৫০ মিলি. বিটের রস পান করুন।
টক দই: কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় টক দই খেলে, যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। নিউট্রিয়েন্টস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দইয়ের মতো গাঁজানো দুগ্ধজাত দ্রব্য হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
তেঁতুলের রস: হঠাৎ প্রেশার বেড়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে তেঁতুলের রসও খেতে পারেন। এতে করে কিছুক্ষণ ব্যবধানে আপনি শান্তি অনুভব করবেন। তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হ্রাস করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
কলা: কলাতে মিনারেল হিসেবে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়াম সাহায্য করে আমাদের শরীরের রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
কমলা: প্রেশার নিয়ন্ত্রণে খেতে পারেন ভিটামিন সি তে ভরা কমলাও। এই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই উপকারী। কমলার পুষ্টি উপাদান হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। হৃদপিণ্ডের ফাংশন ভালো রাখতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬, পটাসিয়াম , ম্যাগনেশিয়াম এর জুড়ি নেই। এসব উপাদান আমরা একসাথে কমলার মধ্যে পেয়ে থাকি। তাই হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে হলে কমলা খেতে হবে প্রতিদিন ।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রোজ একটি করে কলা ও কমলা খাওয়ার অভ্যাসও গড়ে তুলতে পারেন। সেই সপ্তাহে অন্তত দুইদিন রাখুন বিট, কুমড়ার বীজ, টমেটোর মত সবজি। আর দুপুরের খাবার খাওয়ার পর সপ্তাহে অন্তত একদিন রাখুন টকদই। ভালো রাখুন আপনার হৃদয়।