1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
ভারতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের করুণ অভিজ্ঞতা | দৈনিক সকালের বাণী
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

ভারতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের করুণ অভিজ্ঞতা

ঠাকুরগাঁও অফিস
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫
  • ৪২ জন দেখেছেন
পেটের দায়ে কিংবা উন্নত জীবনের আশায় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন তারা। কেউ গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে, কেউবা চিকিৎসার জন্য। দীর্ঘ দুই-তিন বছর কেউ আবার ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ভিনদেশে দিনাতিপাত করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই নেমে আসে দুর্যোগ। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের হাতে আটক হন তারা। এরপর দীর্ঘ বন্দীদশা, অমানবিক আচরণ এবং সবশেষে অনেকটা জোর করেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো – এমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সম্প্রতি ভারত থেকে ফেরত আসা কয়েকজন বাংলাদেশি।
যশোরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যিনি বোম্বাইয়ে কাজ করতেন, জানান তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা। “প্রায় ২০ দিন আগে হঠাৎ করে বাসা থেকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা এসে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। আমাদের ভোটার আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন তথ্য চায়, আমরা দিই। এরপর প্রায় ১৫ দিন আমাকে থানার মধ্যে বন্দি করে রাখে। আমার সাথে আরও অনেক  বাংলাদেশি সেখানে বন্দি ছিল। বোম্বাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশিদের ধরে এনে সেখানে রাখা হতো।”
সাইফুল জানান, একসময় তারা জানতে পারেন যে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর তাদের বিমানে করে বোম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে সীমান্তে।
 “আমরা যে বিমানে ছিলাম, সেখানে প্রায় দুই থেকে তিনশ’ বাংলাদেশি যাত্রী ছিল। আমাদের বলা হয়েছিল, সীমান্ত দিয়ে না গেলে গুলি করা হবে। রাতের বেলা গাড়িতে করে সীমান্তে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করানো হয়। ভোরের দিকে সীমান্তের কাছে এনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে প্রবেশ করো, না হলে গুলি করব।’”
তাদের আরও জানানো হয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দুটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়বে এবং সেই শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে হবে। সাইফুলের সাথে আরও প্রায় ৫০ জনের মত ছিলেন। অনেকেই ভয়ে দিগ্বিদিক পালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ১৭ জন একসঙ্গে গতকাল আটক হয়েছেন এবং আজ পর্যন্ত তারা সেখানেই আটক অবস্থায় রয়েছেন। তাদের ভবিষ্যৎ কী, তা তারা জানেন না।
ভারতে বসবাসরত অন্যান্য বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সাইফুল বলেন, “সেখানে যত বাংলাদেশি আছে, সবাইকে ধরে ধরে সীমান্তে আনা হচ্ছে, যেভাবে আমাদের আনা হয়েছে।
তিনি জানান, যেদিন তিনি আটক হন, সেদিন রাত তিনটার দিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তার বাড়িতে আসে এবং তাদের বাংলাদেশি বলে ধরে নিয়ে যায়। তাদের কাছে ভারতীয় কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
ভারতে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, “আমরা মূলত কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানে বাংলাদেশ থেকে বেশি টাকা পাওয়া যায়, সেই জন্যই যাওয়া। তবে এই ক্ষেত্রে মুসলমানদের বেশি করে ধরা হচ্ছে।”
নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের তেমনভাবে নির্যাতন করা হয়নি। তারা মূলত সীমান্তে আনার পর আমাদেরকে জোর করে বাংলাদেশের প্রবেশ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রবেশ না করলে তারা আমাদেরকে গুলি করত। পরবর্তীতে সীমান্তে আনার পর তারা দুটি ফাঁকা গুলি করে তখনই আমরা দৌড়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করি। যখন আমি থানায় আটক ছিলাম এবং বাংলাদেশে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কষ্ট সম্মুখীন হতে হয়েছে।
 তবে ভারতে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্ত্রী, মা ও দুই সন্তানসহ বসবাস করতেন। দুই-তিন বছর আগে এক দালালের মাধ্যমে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গেই আটক রয়েছেন।
যশোরের আরেক বাসিন্দা জাহানারা, যিনি গতকাল ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় আটক হয়। যে ১৭ জন হরিপুর উপজেলায় আটক হয় সেই ১৭ জনের মধ্যেও জাহানারা একজন।
যিনি ৫ বছর ধরে রাজস্থানে বসবাস করছিলেন, একইরকম অভিযোগ করেন। “সেখানে মুসলমানদের ধরে ধরে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মুসলমানদের সেখানে থাকতে দেওয়া হবে না।” সীমান্ত পারাপারের কষ্টের কথা ভুলতে পারছেন না তিনি। “যখন আটক করা হয়, তখন বুঝতে পারিনি যে এত কষ্ট দিয়ে তারা আমাদের বাংলাদেশে পার করবে। আর কখনো আমরা ভারতে যাব না, আমাদের দেশেই ভালো। বাংলাদেশে ভিক্ষা করে খাব, তবুও আর ভারতে যাব না।” কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহানারা।
তিনি বলেন, “সাধারণত গরু বা কোনো পশুকে যখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে নেওয়া হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে।”
চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন জাহানারা। ভালো চিকিৎসা করাতে না পেরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে নিজের খরচ চালাতেন। সীমান্ত পার করার সময় বিএসএফ তাদের শিখিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ধরলে যেন তারা বলে যে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছিল, কিন্তু বিএসএফ তাদের যেতে দেয়নি, তাই তারা আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারা বিজিবিকে সত্য কথাই বলেন।
আসার সময় তাদের সাথে থাকা একটি শিশু বাচ্চা হারিয়ে গিয়েছিল, পরে অবশ্য পুলিশ সেটি উদ্ধার করে।
 জাহানারা বলেন, “আমাদেরকে ঠিক গরুর মতো করে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, এটা খুব কষ্টের।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন ভুক্তভোগী জানান, তাকেও একই কায়দায় অন্যান্যদের মতো বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভারত থেকে ফেরত আসা এই মানুষগুলোর করুণ অভিজ্ঞতা একদিকে যেমন ভিনদেশে অবৈধভাবে বসবাসের ঝুঁকির কথা তুলে ধরে, তেমনি অন্য দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগও সামনে নিয়ে আসে। বর্তমানে আটক থাকা এই ১৭ জন এবং এর আগে ফেরত আসা আরও অনেকে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের যেভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই মানবিক ছিল না। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকার এই ফেরত আসা মানুষদের পুনর্বাসনে কী পদক্ষেপ নেয়।
বিজিবির কাছে আটক হওয়া  নুরুন্নাহার নামে একজন বলেন, আমাদেরকে আজ থেকে প্রায় ১৫ দিন আগে আটক করা হয়। গতকালকে সীমান্তে এনে আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে সীমান্ত ফিরে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। এ সময় কতবার যে মাটির মধ্যে পড়ে যেতে হয়েছে দৌড়িয়ে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। আমাদের টিমে যারা ছিল বেশিরভাগ ছিল মহিলা এবং আমাদের সবাই অনেক কষ্ট করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করে। আমাদের মত আরো কয়েকটি টিম করে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে। আমাদেরকে যখন মালদহ এলাকায় নিয়ে আসা হয় তখন আমাদের সাথে আরো অনেক লোক সংখ্যা ছিল কিন্তু তাদেরকে আমরা পরবর্তীতে আর দেখতে পাই না। আমাদের মনে হয় তাদেরকেও অন্য সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )