1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে দুশ্চিন্তার ছাপ বাংলাদেশে | দৈনিক সকালের বাণী
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:২৭ অপরাহ্ন

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে দুশ্চিন্তার ছাপ বাংলাদেশে

সকালের বাণী ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ৭৭ জন দেখেছেন

আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। টানা কয়েক দিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলছে সংঘাত। এই যুদ্ধে দুই দেশেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তবে যুদ্ধ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সেটার প্রভাব পড়ছে গোটা বিশ্বেই। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ এর ধাক্কা লাগতে পারে অর্থনীতিতে।

স্বাভাবিকভাবেই এই যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ নানা খাতকে প্রভাবিত করবে। ফলে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষেরও। সম্ভাব্য সংকট নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হচ্ছে সরকারকেও। বিশ্লেষকরা জানান, এই সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিলে জ্বালানি নিরাপত্তা, বিমান চলাচল, বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হলে তেলের দাম বেড়ে যাবে। কারণ এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল সরবরাহ হয়।

অনেকেই এই যুদ্ধকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হিসেবে দেখছেন। সেদিক থেকে যুদ্ধের তীব্রতা যত বাড়বে তত বেশি নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। যার বহুমাত্রিক প্রভাব থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়।

বাড়বে জ্বালানি তেলের দাম

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেল সরবরাহের কেন্দ্রবিন্দু। যুদ্ধের ফলে হরমুজ প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ রফতানি রুট বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বিপর্যয়করভাবে বাড়তে পারে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ইতোমধ্যে ১২০ ডলার ছুঁয়েছে, যা শিগগিরই ১৩০ ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রতি বছর ৬০-৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের উল্লম্ফন সরাসরি আমদানি ব্যয় বাড়াবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ, পরিবহন ব্যয় ও শিল্প উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সরকারকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হতে পারে, বাড়বে বাজেট ঘাটতি। এর ফল হিসেবে জ্বালানিভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব ঘাটতির শঙ্কা তৈরি হবে।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চললে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। সরকার বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।

বাড়বে আকাশ ও নৌপথে সরবরাহের খরচ

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১২ শতাংশ বাণিজ্য পণ্য সুয়েজ খাল ও রেড সি (লোহিত সাগর) রুট দিয়ে পরিবাহিত হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এসব রুট ব্যবহার অনিরাপদ হয়ে পড়লে জাহাজগুলোকে আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ ঘুরে আসতে হবে, যা ১০-১৫ দিন সময় ও বিপুল খরচ বাড়িয়ে দেবে।

এছাড়া বর্তমানে বিশ্বের সকল বিমান ইরাক-ইরান ও ইসরায়েলের আকাশসীমা বাদ দিয়ে চলাচল করছে। এতে আকাশপথের দূরত্ব যেমন বাড়ছে তেমনি সময়ও বেশি খরচ হচ্ছে। যুদ্ধ আরও তীব্র হলে মধ্যপ্রাচ্যে যেসব বিমান ট্রান্সজিটের জন্য থামত সেটি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ফলে সার্বিকভাবে আকাশপথের খরচও বাড়বে।

প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সেদিক থেকে আমাদের দেশের প্রধান রেমিট্যান্স উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের কর্মস্থল ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। অনেকে নিরাপত্তার কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হতে পারেন। এর ফলে প্রবাসী আয় হঠাৎ কমে যেতে পারে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ তৈরি করবে এবং টাকার মান দুর্বল হতে পারে।

অন্যদিকে ইরানে বাংলাদেশের শ্রমিক সেভাবে না থাকলেও যুদ্ধের ব্যাপকতায় মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে যেতে পারে। এতে শুধু ইরান নয় বরং পুরো মধ্যপ্রাচের নির্মাণসহ বিভিন্ন শিল্প বিঘ্ন হতে পারে। ফলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। যার প্রভাব সরাসরি রেমিট্যান্সে পড়তে পারে।

আছে মূল্যস্ফীতির শঙ্কাও

তেল ও শিপিং খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে। খাদ্যপণ্য, গৃহস্থালি দ্রব্য, শিল্পের কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে ২০২২ সালে দেশে যে ডলারের সংকট ও মূল্যস্ফীতিজনিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, তার পেছনেও ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধি। সেই যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এখন ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা দেখে ঘরপোড়া গরুর মতো সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। অর্থনীতি এমনিতেই একধরনের স্ট্যাগফ্লেশনে (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+ নিম্ন প্রবৃদ্ধি) আছে—যেখানে প্রবৃদ্ধি গেলেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে—এখন ইরান-ইসরায়েলে যুদ্ধের কারণে স্ট্যাগফ্লেশনের চাপ বাড়লে অর্থনীতি সংকোচনের ধারায়ও চলে যেতে পারে।

এছাড়া দেশের জ্বালানিনির্ভর বিভিন্ন শিল্পের খরচ বেশি হবে। যেটির প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছুটা মূণ্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রফতানি চেইনে ধাক্কা

যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা চাহিদা কমবে। এটির সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে পড়বে। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে যেসব বিষয়ে সরাসরি বাণিজ্য রয়েছে সবই হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুধু ভূরাজনৈতিক সংঘাত নয়—এটি একটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল, রফতানিনির্ভর ও জ্বালানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই এখনই সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি, যাতে সম্ভাব্য অভিঘাতের ঝুঁকি কমানো যায়।বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে, যা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতাকে ব্যাহত করবে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়বেন ছোট ও মাঝারি রফতানিকারকরা।’ তাই জ্বালানি আমদানিতে কৌশলগত পরিকল্পনা ও খাতভিত্তিক প্রণোদনার ব্যাপারও জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মাদ মাহমুদুর রহমান যুদ্ধের প্রভাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘যুদ্ধের মূলনীতি হলো এক দেশের সামরিক শক্তির সঙ্গে অন্য দেশের সামরিক শক্তির লড়াই। কিন্তু ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে বিভিন্ন বেসামরিক লোকজনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ইরানের সঙ্গে বাংলাদেশের নানাভাবে সম্পর্ক আছে। বর্তমানে ইরানে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য হলো তেল রফতানির কেন্দ্রবিন্দু। তাই যুদ্ধের পরিস্থিতি যত খারাপ হবে তত তেলের দাম বাড়বে। এছাড়া পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী ব্যাহত হলে সেটির প্রভাবও পড়বে সারাবিশ্বে। তাই এই যুদ্ধের প্রত্যক্ষ প্রভাব বাংলাদেশে সেভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতি, জ্বালানি ও রফতানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )