


থোড় এসেছে রোপা আমন খেতের গাছে। আবার আগাম জাতের ধান থেকে শীষ বের হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় তারাচাঁন মানে ইঁদুর আক্রমণ করছে রোপা আমন জমিতে, কৃষকরা জমিতে গইল (ফাঁকা) করেও ইঁদুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। কৃষককুল পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। কৃষকরা বলছেন, এ বছর ইঁদুর ধানের গোড়া থেকে কেটে দিচ্ছে। শীষ কেটে দেয়ায় আর শীষ বের হতে পারবে না। উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত কোন কৃষক মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি। ইঁদুর দমনে ন্যাচারাল গুঁইসাপ ও বিজি কাজ করে থাকে। যাতে কৃষকরা তাদের না মারে সে জন্য কৃষি উপ-সহকারীগণ মাঠে কাজ করছে। পার্বতীপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা রয়েছে।
পৌরসভা, পলাশবাড়ী, রামপুর, মোস্তফাপুর, চন্ডিপুর, হাবড়া, হামিদপুর, মন্মথপুর, বেলাইচন্ডিসহ এলাকার ফসলি রোপা আমন মাঠ সরেজমিনে দেখা গেছে, রোপা আমন খেতের গাছে থোড় এসেছে। আবার কিছু আগাম জাতের ধান থেকে শীষ আসছে। চন্ডিপুর ইউনিয়নের গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, কুলোত চাউল ভাজি বিশ মাখি জমির আইলত দেওছো, আইল ধরি যখন হাটিবে এ্যালা তখন ওয় তারাচান ইঁদুর মরি যাইবে। ওর মরণ এইবার হইবে সোনাচানের! তাও মরোসে না বাহে। উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের ঝাপের ডাঙ্গা এলাকার কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, এখনও ধানের গাছ থোড় পর্যায়ে রয়েছে। এখনো শীষ বের হয়নি। চারবার বালাইনাশক ছিটানো হয়েছে, তারপরও কাজ হচ্ছে না। ইঁদুর আক্রমণে ১০ কাটা জমি বিনষ্ট হয়েছে। এখানকার বেশকিছু কৃষকে একই অবস্থা। হামিদপুর ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি কৃষক ছোলেমান আলী বলেন, আমাদের মতো বর্গা চাষিদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কেবল মাত্র ধানের থোড় বের হচ্ছে। এ মুহূর্তে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, আবাদের শেষ সময়ে হঠাৎ ধানের শীষের গোড়া কেটে দিচ্ছে স্থানীয় ভাষায় (তাঁরাচান) নামে পরিচিত ইঁদুর। আমার ৪ কাটা জমিতে ইঁদুর বিনষ্ট করেছে। এতে করে রোপা আমন নিয়ে বড় চিন্তায় আছি। ইঁদুর আক্রমণ কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। জমিতে গইল করে ইঁদুর আক্রমণ রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে পাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক স্প্রে দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এবার উপজেলায় ২৮ হাজার ৮শ’ ৮২ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় ৮৬ হাজার ৬০১ কৃষক রয়েছে। এব্যাপারে পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজিব হুসাইন বলেন, কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইঁদুর মারার যে ফাঁদগুলো রয়েছে সেগুলো ব্যবহারের জন্য আমরা কৃষককে বলছি। সমন্বিত উদ্যোগ একই সাথে যে সব স্থানে বা ঘরে-বাইরে ইঁদুর মারার কার্যক্রম হাতে নেয় কৃষক। এবিষয়ে কৃষকদের আমরা সজাগ করার চেষ্টা করছি।