1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
২৬ টুকরো লাশ : দুই তথ্য দিলো পুলিশ ও র‌্যাব | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

২৬ টুকরো লাশ : দুই তথ্য দিলো পুলিশ ও র‌্যাব

সকালের বাণী ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৮ জন দেখেছেন

ঢাকার হাই কোর্টের সামনে প্লাস্টিকের ড্রামের ভেতর থেকে আশরাফুল হক নামে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হওয়া মামলায় নিহত ব্যক্তির বন্ধু জরেজকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে আশরাফুল হত্যার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে দুই রকম তথ্য দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

ডিবি জানায়, বন্ধুকে পরকীয়া প্রেম থেকে সরাতে গিয়ে নিজেই ঐ নারীর প্রেমে পড়ে যান আশরাফুল। পরে দুই বন্ধু এবং ঐ নারীর ত্রিভুজ প্রেমের সংকটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আশরাফুল। অন্যদিকে শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানিয়েছে, প্রেমিকাকে দিয়ে ‘ফাঁদে ফেলে’ আশরাফুলের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের। সে পরিকল্পনায় আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হল, সেটির ‘স্পষ্ট ধারণা’ পাওয়া যায়নি।

তখন হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নিশ্চিত হতে র‍্যাব জানায়, জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের। আর শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে জরেজকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটা আসলে একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি। মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার পরিচয় হয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে রিসিভ করেন এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার জরেজুল ইসলাম একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। আনুমানিক দেড় মাস আগে সে দেশে আসে। বিদেশে থাকাকালীন জরেজুল ইসলামের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমা নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। জরেজুল ইসলাম দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী বিষয়টি জানতে পারলে তাদের মধ্যে পারিবারিক মনোমালিন্য হয়। জরেজুলের স্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরে তার (জরেজুল) বন্ধু আশরাফুলকে শামীমার মোবাইল নম্বর দেন। তার বন্ধু জরেজুলকে এসব থেকে নির্বৃত্ত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু আশরাফুল নিজেই এক পর্যায়ে শামীমার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, নিহত আশরাফুল তার বন্ধুকে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জাপান পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, তার মধ্যে শামীমা ৭ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিলো। মূলত এই টাকার সংস্থান এবং শামীমার সঙ্গে একান্তে দেখা করার আশায় দুই বন্ধু একত্রে রংপুর থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকায় তিনজন একত্রে দেখা করার জন্য একটি নিরাপদ স্থান খোঁজ করছিল। পরে তিনজনের পরিকল্পনায় ডেমরার দক্ষিণ ধনিয়াতে একটি বাসা ভাড়া নেয় এবং একই দিন দুপুর বাসায় ওঠে, তিনজন মিলে সেই বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। স্থানীয় বাজার থেকে তারা একটি তোশক, তিনটি বালিশ ও জানালার পর্দা কেনে। পরস্পর সম্মতিতে তারা একে অপরের সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে।

কিন্তু আশরাফুল শামীমার সঙ্গে অস্বাভাবিক যৌনকর্ম করতে চাইলে শামীমা তাতে বাধা দেন। এতে করে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং শামীমা কান্নাকাটি শুরু করলে জরেজুল বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর ওপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যান। আশরাফুল শামীমাকে জোরাজুরি করার এক পর্যায়ে শামীমা কৌশলে আশরাফুলের হাত বেঁধে অস্বাভাবিক মেলামেশা করতে প্রলুব্ধ করে। আশরাফুল এরপর অস্বাভাবিক যৌনকর্ম শুরু করলে ক্ষিপ্ত জরেজুল প্রথমে আশরাফুলকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে আশরাফুল চিৎকার শুরু করলে শামীমা তার ওড়না এবং সঙ্গে থাকা স্কচটেপ দিয়ে আশরাফুল এর মুখ বেঁধে দেয়। এভাবে মুখ বাঁধা থাকায় এবং জরেজুল ইসলামের আঘাতে এক পর্যায়ে আশরাফুল মারা যায়।

যদিও শুক্রবার রাতে ডিবির পক্ষে থেকে জানানো হয়, আশরাফুল শারীরিক সম্পর্কের দাবি জানালে বিষয়টি টের পেয়ে জরেজুল ক্ষিপ্ত হয়ে বাসা থেকে বের হন। বের হওয়ার সময় ভুলে আশরাফুলের মোবাইলও সঙ্গে নিয়ে যান। পরে মোবাইল নিতে ফিরে এসে জরেজুল দেখেন শামীমা ও আশরাফুল একসঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন। তিনি বাসার ভেতরে লুকিয়ে রাতের অপেক্ষা করেন।

ডিবি সূত্রে আরও জানায়, ওই রাতে শামীমা ও আশরাফুল আবার যৌন সম্পর্কে জড়ালে জরেজুল তা মেনে নিতে পারেননি। সঙ্গে থাকা জরেজুল বালিশ চাপা দিয়ে আশরাফুলকে ধরে রাখেন এবং শামীমাও তাকে সাহায্য করেন। এক পর্যায়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের মাথায় আঘাত করলে তিনি মারা যান। হত্যার পর মরদেহ দুই দিন বাসার ভেতরে রাখা হয়।

কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিবি প্রধান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আশরাফুল মারা গেলে দুজনে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং লাশ গুম করার উপায় খুঁজতে থাকে। ১২ নভেম্বর সারারাত তারা লাশের সঙ্গেই একই বাসায় অবস্থান করে এবং ১৩ নভেম্বর সকালে জরেজুল ইসলাম ও শামীমা দুজনে পরিকল্পনা করে লাশ গুম করার জন্য বাজার থেকে দুইটি প্লাস্টিকের ড্রাম, পলিথিন ও লাশ কাটার জন্য স্থানীয় দোকান থেকে একটি চাপাতি কিনে আনে। বাথরুমের পানির ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে জরেজুল ইসলাম লাশটি কেটে টুকরা করে শামীমার সহায়তায় ড্রামে ভরে। শামীমা তখন বাইরে গিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে আনে এবং দুজনে সিএনজিতে করে লাশের ড্রামসহ বেরিয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে ফুটপাতে তারা লাশ ভর্তি ড্রাম দুটি রেখে দ্রুত বাসায় ফিরে যায়। বাসায় ফিরে দুজনে বাসার সকল মালামাল নিয়ে বের হয়ে যায়। শামীমা কুমিল্লার দিকে রওয়ানা হয় এবং জরেজ রংপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এক পর্যায়ে সে সিদ্ধান্ত বদল করে কুমিল্লায় তার এক বন্ধুর বাসায় গমন করলে সেখান থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এ দিকে শামীমাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ভিন্নভাবে দেয় র‍্যাব। শনিবার (আজ) কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, শামীমার সঙ্গে জরেজের এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজ শামীমাকে জানায়, তার এক বন্ধুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যাবে। এর থেকে জরেজ ৭ লাখ টাকা, আর শামীমা ৩ লাখ টাকা ভাগ করে নেবে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা নিহত আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে একমাস আগে থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করে তার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। মোবাইল ফোনে তাদের নিয়মিত অডিও এবং ভিডিও কলে কথা চলতে থাকে। পরবর্তীতে গত ১১ নভেম্বর রাত ৮টায় জরেজ ভিকটিম আশরাফুলকে নিয়ে ঢাকায় রওনা করে। ঢাকায় আসার পর গত ১২ নভেম্বর জরেজ ও আশরাফুল শামীমার সঙ্গে দেখা করে ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তিনজন একত্রে ভাড়া বাসায় ওঠে।

ফায়েজুল আরেফীন বলেন, রংপুর থেকে ঢাকায় আসার আগে জরেজ তার প্রেমিকা শামীমাকে ফোনে জানায়, আশরাফুলের সঙ্গে সে যেন অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে এবং সেই ভিডিও দেখিয়ে যাতে ১০ লাখ টাকা আদায় করা যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী আশরাফুলকে মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে হালকা অচেতন করে শামীমা। যাতে বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করলে আশরাফুল তা বুঝতে না পারে। পরবর্তীতে যখন তারা একান্ত সময় কাটায় তখন জরেজ বাইরে থেকে ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও শামীমার মোবাইলে ধারণ করা হয়, যা বর্তমানে উদ্ধারকৃত মোবাইলে রয়েছে।

শামীমার বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, গত ১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ আশরাফুলের হাত দড়ি দিয়ে বেধে ফেলে এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকে দেয়। জরেজ অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে উত্তেজিত হয়ে অচেতন থাকা ভিকটিম আশরাফকে হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। অতিরিক্ত আঘাত এবং মুখ কসটেপ দিয়ে আটকানো থাকায় শ্বাস না নিতে পেরে ঘটনাস্থলেই আশরাফুল মারা যায়। পরে লাশ একই ঘরে রেখে জরেজ ও শামীমা রাত্রিযাপন করে এবং তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )