1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
রংপুরে পাঁচ বছরে আবাদি জমি কমেছে ৩৪৮৪ হেক্টর হুমকিতে কৃষি অর্থনীতি  | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
Notice :
This Website is Under Construction ...

রংপুরে পাঁচ বছরে আবাদি জমি কমেছে ৩৪৮৪ হেক্টর হুমকিতে কৃষি অর্থনীতি 

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোডের সময় : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ জন দেখেছেন
এক সময়ের খাদ্য শস্য ভাণ্ডার খ্যাত রংপুরে দিন দিন কমে আসছে কৃষি জমির পরিমাণ। প্রতি বছরই হাজার হাজার হেক্টর জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। আবাসন আর শিল্পায়নের জালে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে কৃষি নির্ভর রংপুরের অর্থনীতি। রংপুর জেলায় আবাদি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদাও। গত পাঁচ বছরে এ জেলায় আবাদি জমি কমেছে ৩ হাজার ৪৮৪ হেক্টর। একই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ১৮৩ জন। খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে ২৭ হাজার ৫৯৪ মেট্রিক টন। ৫ বছরে খাদ্য উদ্বৃত্ত বেড়েছে মাত্র ২ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। 
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় মোট কৃষকের ৫ ভাগের এক ভাগই ভূমিহীন। জেলায় সামর্থ্যবান বা বিত্তশালী কৃষকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। জেলায় মাত্র ৬ হাজার বিত্তবান (বড়) কৃষক রয়েছেন। সূত্র বলছে, চাহিদা অনুযায়ী রংপুরে তেমন একটা উৎপাদন বাড়েনি। এছাড়া উদ্বৃত্ত ফসল আনুপাতিক হারে তেমন একটা বাড়ে নি । এক সময় রংপুরের উদ্বৃত্ত ফসল দিয়ে দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো হত। বর্তমানে যে ফসল উৎপাদন হয় তা দিয়ে জেলার ৩২ লাখ মানুষের চাহিদা মিটলেও প্রতি বছরই আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। অকৃষি খাতে চলে যাওয়া জমিতে গড়ে উঠছে শিল্প কলকারখানা, বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে চাহিদানুযায়ী বসতভিটার সংখ্যাও।
আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় এ পরিস্থিতি দিন দিন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে কৃষি নির্ভর রংপুরসহ উত্তর জনপদের সাধারণ মানুষকে। এতে করে উত্তরের কৃষি অর্থনীতির বিপর্যয়ের সাথে দেখা দিতে পারে চরম খাদ্য সংকটও। মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ বৈরাগীগঞ্জ এলাকার শামীম পারভেজ বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও এই উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ঈর্ষণীয়। সেসময় দিগন্ত জোড়া কৃষি জমি আর ক্ষেতের পর ক্ষেত চোখে পড়ত। এখন সেই চেনা সবুজের ক্ষেতে শিল্প মালিকরা কলকারখানা তৈরি করেছে। কৃষি জমি আর কৃষি ক্ষেতে নেই।
পীরগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, আগে মহাসড়কের দুপাশ জুড়ে শুধু কৃষি জমি দেখা যেত। এখন সেই জমিতে অনেক সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি গড়ে উঠেছে। দিন দিন রংপুর অঞ্চলে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর অকৃষি খাতে। এটা আমাদের আগামী প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তার দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। রংপুর জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রতি মাসে ৯-১০ হাজার জমি কেনাবেচাসহ বিভিন্ন দলিল সম্পাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে কৃষিজমি আছে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ। কেউ কৃষিজমি কিনে অকৃষি কাজে ব্যবহার করবে কিনা তা বোঝা সম্ভব নয়। আইন করে শুধু কৃষিজমি নয়, যেকোনো জমির ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্যশস্য জোগান দেয়া সম্ভব হলেও আগামীতে এই জেলায় খাদ্য উদ্বৃত্ত নাও থাকতে পারে এমনটা শঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষি আন্দোলনকারীরা বলছেন, জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইনের প্রয়োগ না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। এতে করে কৃষি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত রংপুর অঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুরের বসতভিটা ও আবাদী জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ  বলেন, কথিত শিল্পায়নের নামে তা সুস্পষ্টভাবে কৃষি জমি ধ্বংসের নামান্তর। কৃষকের শ্রমে-ঘামে দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। কৃষকের জীবনে প্রতি মুহূর্তে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলেও তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দিন রাত পরিশ্রম করে। অথচ কৃষি জমি বিধ্বংসী মুনাফা লোভীরা একের পর এক কৃষি জমি ধ্বংস করছে। এতে করে রংপুর অঞ্চলে অচিরেই খাদ্য নিরাপত্তা হুমকি প্রকট আকার ধারণ করবে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এই জনপদের জীবন ও জীবিকা। আবাসন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কি ধরনের ভূমি ব্যবহার করা দরকার সে বিষয়ে ভাববার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৫ বছর আগে জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১ হাজার ৪৯১ হেক্টর। বর্তমান জমির পরিমান কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৭ হেক্টরে। ৫ বছর আগে জেলার জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৭২ হাজার ১০৬ জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ২৬ হাজার ২৮৯ জন। উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন। বার্ষিক চাহিদা ছিল ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪ লাখ ১ হাজার ৫৫০ টন। ৫ বছর পরে চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়ে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯৮ টন। উৎপাদন কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টন। উদ্বৃত্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন।
সূত্র মতে, জেলায় শিক্ষিতের হার ৬৫ শতাংশ। কৃষক পরিবার ৫ লাখ ৩৩ হাজার ১২৯টি। ভূমিহীন কৃষক পরিবার রয়েছে ৯৫ হাজার ১৪০ জন প্রান্তিক কৃষক ২ লাখ ৪ হাজার ৪৯০ জন। ক্ষুদ্র কৃষক ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৩ জন। মাঝারি কৃষক ৫০ হাজার ৭৫৪ জন। বড় কৃষক ৬ হাজার ৭৪ জন। জেলায় এক ফসলি জমি রয়েছে ৮ হাজার ৭৭৩ হেক্টর, দুই ফসলি ৮৭ হাজার ৪৭২ হেক্টর, তিন ফসলি ৯২ হাজার ৮৩২ হেক্টর, চার ফসলি ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর। নীট ফসলি জমি রয়েছে ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৩৩ হেক্টর।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, কৃষি জমি কমলেও উৎপাদনে ঘাটতি সৃষ্টি হয়নি। বরং মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদে উৎপাদন বাড়িয়ে আবাদি জমির ঘাটতি পূরণ করতে পারছে। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ উচ্চফলনশীল এবং স্বল্পকালীন ফসল আবাদে গুরুত্ব দেয়ায় কৃষিজমি কমা সত্ত্বেও জেলায় উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত আছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
কৃষিজমি কমে যাওয়ার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ভবিষ্যতে উৎপাদনে সংকট দেখা দেবে জানিয়ে রংপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রংপুরের ফসল উদ্বৃত্ত থাকছে। তবে অবশ্যই তিন ফসলি জমি যাতে অকৃষি খাতে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ একই জমিতে একাধিকবার আবাদ করলে মাটির ওপর চাপ পড়া স্বাভাবিক। এজন্য সুষম সার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষির জমির ঘাটতি পূরণে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। তাই শস্য উৎপাদনে রংপুরের কৃষিজমি রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। এক সময় কৃষি জমি পড়ে ছিল। এখন কিন্তু তা হচ্ছে না, বরং একই জমিতে দুই থেকে তিনবার করে চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদেরকে অল্প জমিতে বেশি ফলন ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ করতে হবে। তবেই কৃষি জমির ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব হবে। রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আকবর আলী বলেন, রংপুর বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করছে। এটি কৃষিজমি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ। কৃষিজমি রক্ষায় যে বিদ্যমান আইন আছে, তা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )