নীলফামারীর সৈয়দপুরে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে অত্যন্ত অপরিস্কার, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশে নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে। আর এসব হোটেল রেস্তোরাঁর খাবার খেয়ে মানুষজন পেটের পীড়াসহ নানা রকম রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নীলফামারীর বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর। উপজেলা এ শহরের অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্যক হোটেল রেস্তোরাঁ। এ সব হোটেল রেস্তোরাঁর মধ্যে আবার বেশ কয়েকটি অভিজাত শ্রেণিরও রয়েছে। যে সব হোটেল রেস্তোরাঁর নাম কিংবা খ্যাতি রয়েছে গোটা রংপুর বিভাগ জুড়ে।
তবে শহরের এ সব হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে খাবার তৈরির পরিবেশ অর্থাৎ রান্না ঘরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অনেক হোটেল রেস্তোরাঁর রান্না বান্না করার মতো নিজস্ব পর্যাপ্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় নেই। তারা মূলতঃ পরিত্যক্ত জায়গা কিংবা হোটেল রেস্তোরাঁর পাশে থাকা ড্রেনের ওপর রান্নাবান্না করে। শুধু রান্নাবান্নার জায়গায় নয়, অনেক হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরির পর সে সব খাবার সংরক্ষণের জায়গারও সংকট রয়েছে। অনেক হোটেল রেস্তোরাঁয় পঁচাবাসি খাবার দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে অহরহ। আগের দিনের রান্না করা খাবার ফ্রিজে রেখে দিয়ে পর দিন সে সব গরম করে পুনরায় গ্রাহকদের মাঝে পরিবেশন করা হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে খাবার তৈরিতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। একই তেল দিয়ে সপ্তাহ জুড়ে পিয়াজু, সিঙ্গারা, নিমকি, সমুচা, পরাটা, পুরি প্রভূতি ভাঁজা হচ্ছে। অনেক সময় আবার আগের তেলের সঙ্গে নতুনভাবে কিছু তেল সংযুক্ত করে এ সব খাবার ভাঁজা হচ্ছে।
একেবারে কুঁচ কুচেঁ কালো তেলে ভাঁজা বিভিন্ন খাবার খেয়ে মানুষজন পেটের পীড়াসহ নানাবিধ রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও মাঝে মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে শহরের হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু তারপরও কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে। এ সব দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টরা বলছেন তাদের লোকবল ও নিজস্ব বাহন (ভেহিকেল) কম। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত এ সব তদারকি করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।তবে মাঝে মধ্যে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করে থাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো। কিন্তু তাতেও বিন্দু মাত্র টনক নড়ছে না হোটেল রেস্তোর্রাঁর মালিকদের।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের একটি ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগার সৈয়দপুর শহরের বেশ কয়েকটি হোটেল রেস্তোরাঁ, কাঁচাবাজারে তাৎক্ষণিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়। এ সময় ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগারে ওয়েল টেস্ট কিট ব্যবহার করে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো ব্যবহৃত তেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ সময় শহরের শহীদ তুলশীরাম সড়কের (দিনাজপুর রোড) নাটোর দই ঘর নামক একটি মিষ্টির দোকানে পুরাতন তেল দিয়ে নিমকি ভাঁজা হচ্ছিল। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগারের ওই তেল নিয়ে ওয়েল টেস্ট কিট ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, সেখানে নিমকি ভাঁজার কাজে ব্যবহৃত সংগৃহিত তেল পরীক্ষায় লিমিট তিন থাকার কথা সেখানে লিমিট পাঁচ পাওয়া গেছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগারের ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. মমিদুল ইসলাম জানান, এ সব তেল বিষ হয়ে গেছে। এ সব তেল কোনক্রমে খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা উচিত নয়। এ সব তেলে তৈরি খাবার খেলে মানুষ পেটের পীড়াসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। এ সময় ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হোটেল মালিক সে সব তেল পরিবর্তন করেন। এ সময় হোটেল মালিককে সর্তক করা হয় এ ধরনের ব্যবহৃত তেল দিয়ে আর কোন খাবার তৈরি না করতে। এ সময় সৈয়দপুর উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আলতাফ হোসেন সরকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের ভ্রাম্যমান ল্যাব পরীক্ষাগারের ল্যাব এসিসট্যান্ট মাহমুদুল হাসানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।