1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববাসীকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববাসীকে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান

সকালের বাণী ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৭২ জন দেখেছেন
স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে বুক পেতেছিল ছাত্র-জনতা
স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে বুক পেতেছিল ছাত্র-জনতা

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হতে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই মুনসুন অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। দেশের জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতিসংঘে ‘তিন শূন্য’ তত্ত্বের ওপর গুরুত্বারোপ ড. ইউনূসের

একই সঙ্গে বাংলাদেশের এই মুনসুন অভ্যুত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যে রাষ্ট্রকাঠামো দুঃসহ হয়ে গেছে, তা পুনর্গঠনের জন্য আমাদের তরুণরা এবং দেশের আপামর জনসাধারণ একমত হয়ে আমার এবং আমার উপদেষ্টা পরিষদের উপর আস্থা রেখে সরকার পরিচালনার এক মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছে।

গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সমতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা গভীরতর করার আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

 

স্বৈরাচারের বুলেটের সামনে বুক পেতেছিল ছাত্র-জনতা

ভাষণে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বাংলাদেশে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, এই জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের, অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

ইউনূস বলেন, আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারাপৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক-যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল।

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ অধ্যাপক বলেন, আমাদের ছাত্রজনতা তাদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ড. ইউনূস বলেন, এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধা বঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্ব চেয়েছিল। আমাদের জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য আমাদের নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এই তরুণরা যে প্রজ্ঞা, সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে তা আমাদের অভিভূত করেছে। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করেও, বুক পেতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমাদের এই তরুণরা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল আমাদের তরুণীরা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। আমাদের মায়েরা, দিনমজুরেরা ও শহরের অগণিত মানুষ তাদের সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেমেছিল রাজপথে। তপ্ত রোদ, বৃষ্টি, মৃত্যুভয়কে তোয়াক্কা না করে তারা সত্য ও ন্যায়সঙ্গত আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ব্যাপী রাষ্ট্রযন্ত্রকে পরিচালনা করার অশুভ ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করেছিল।

 

শক্তিশালী অর্থনীতি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই লক্ষ্য

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা গভীর বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে মুখোমুখিভাবে দেখতে পাচ্ছি কীভাবে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কীভাবে রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। কীভাবে জনগণের অর্থ-সম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়েছিল, কীভাবে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যকে অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। কীভাবে প্রত্যেকটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

অর্থনৈতিক কল্যাণ বাড়বে প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতায়

তিনি আরও বলেন, যে রাষ্ট্রকাঠামো দুঃসহ হয়ে গেছে, তার পুনর্গঠনের জন্য আমাদের তরুণেরা এবং দেশের আপামর জনসাধারণ একমত হয়ে আমার এবং আমার উপদেষ্টা পরিষদের উপর আস্থা রেখে সরকার পরিচালনার এক মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছে। দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের উপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য।

‘বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সকল রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে। যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়-ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে সম্পদের পাচার বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। পাচার হয়ে যাওয়া এসব সম্পদ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক জাগরণ ব্যতীত শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। প্রায় এক দশক পূর্বে বিশ্ব সম্প্রদায় সর্বসম্মতভাবে এজেন্ডা ২০৩০ প্রণয়ন করে। এই সার্বজনীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে আমরা সবাই আমাদের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা ও বিশ্বাস অর্পণ করেছি। তবুও মাত্র ১৫ শতাংশের কম লক্ষ্যসমূহ অর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র আরো পিছিয়ে আছে।

বছরে পাচার হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা

তিনি আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসডিজি অর্থায়নে বছরে প্রায় ২.৫ (আড়াই) থেকে ৪ (চার) ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের ঋণের বোঝা, ক্ষয়িষ্ণু আর্থিক সক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা আশা করি— উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন সংক্রান্ত ৪র্থ (চতুর্থ) আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ধরনের জটিল এবং কাঠামোগত সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেওয়া হবে। বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে যেন সব রাষ্ট্র সমানভাবে সম্পদ ও সুযোগের ব্যবহার করতে পারে; তারা নিজেদের কর্মসূচিতে সামাজিক ব্যবসাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিতে পারে; যেন নিম্ন আয়ের দেশগুলোর বাস্তবতা বিশেষভাবে মোকাবিলা করা যায়। যা ব্যবসায়ী উদ্যোগ ও ব্যক্তির সৃজনশীলতাকে উদ্বুদ্ধ করে এবং বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বিশেষভাবে সহায়তা করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা, সক্ষমতা ও সম্পদ একত্রীকরণের মাধ্যমে সবার সামর্থ্য, উদ্ভাবনী শক্তি এবং সমৃদ্ধিকে কাজে লাগাতে হবে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছি, সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করতে হবে।

ভবিষ্যত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি সুযোগ চাইলেন ড. ইউনূস

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩ দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় ভবিষ্যত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশেকে আরও সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে যে, শান্তিরক্ষা এবং সংঘাত মোকাবিলা জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার মূল চালিকাশক্তি। সাম্প্রতিক বিপ্লবকালে জনগণের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আরো একবার শান্তির প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার প্রমাণ করেছে সশস্ত্র বাহিনী। এটা সম্ভব হয়েছে শান্তিরক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের কেন্দ্রবিন্দুতে মানবাধিকারকে স্থান দেওয়ার ফলে।

বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বাড়িয়েছে শান্তিরক্ষীরা

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের সূচনালগ্ন থেকেই শান্তিরক্ষার মতো শান্তি বিনির্মাণেও বাংলাদেশ সমান অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এসেছে। সামনের দিনগুলোতেও আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের মূল্যবোধ ভিত্তিক অবদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা সমুন্নত ও প্রসারিত করতে বদ্ধপরিকর।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩ দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। বসনিয়া থেকে শুরু করে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এসব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা আশা করি, যেকোনো অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন।

জলবায়ুঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান

বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। এই গ্রীষ্মে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপদাহ আমাদের জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কথা স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচার, যাতে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, উদাসীন আচরণ কিংবা এর মাধ্যমে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায়বদ্ধ করা।

জলবায়ু-পরিবর্তনজনিত দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছি। প্যাথোজেনের পরিবর্তনের ফলে নতুন রোগ বাড়ছে, কৃষিক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে, ক্রমহ্রাসমান পানিসম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছে আমাদের বাসযোগ্যতাকে। এ ছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত।

জলবায়ু সম্পর্কিত প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা বিশ্বব্যাংকের

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রাবৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ক্ষুদ্র কৃষক এবং প্রান্তিক পর্যায়ে জীবিকা অন্বেষনকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। আমি আজ যখন এই বিশ্ব সভায় কথা বলছি, তখন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে পঞ্চাশ লাখেরও অধিক মানুষ তাদের জীবদ্দশায় হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করছে।

ড. ইউনূস বলেন, মহাসচিব গুতেরেস্ আমাদের দেখিয়েছেন যে, বিদ্যমান পরিক্রমা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২.৭ (দুই দশমিক সাত) ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

 

জাতিসংঘে ‘তিন শূন্য’ তত্ত্বের ওপর গুরুত্বারোপ ড. ইউনূসের

শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলোচিত তার তিন শূন্য তত্ত্বের জন্য। সেগুলো হচ্ছে— দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে নিজের দেওয়া ভাষণে সেই ‘তিন শূন্য’ তত্ত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্বনমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে মনোযোগী হচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে এ ধরণের পরিবর্তনের সুফলভোগী করতে হলে, নেট-জিরো পৃথিবীর লক্ষ্য সমানভাবে পূরণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে, পারস্পরিক দায়িত্ববোধের মাধ্যমে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সার্বজনীন অঙ্গীকার পূরণে পিছিয়ে পড়ব।

আজকালের মধ্যে দেশে আসতে পারেন ড. ইউনূস

তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, সমগ্র বিশ্ব এক সঙ্গে ‘তিন শূন্য’-এর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি তরুণ-তরুণী চাকরিপ্রার্থী না হয়ে বরং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে।

ড. ইউনূস বলেন, তরুণ-তরুণীরা যেন সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজ নিজ সৃজনশীলতার বিকাশ করতে পারে, যেখানে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ সামাজিক সুফল, অর্থনৈতিক মুনাফা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতার মধ্যে একটি চমৎকার ভারসাম্য আনতে মনোযোগী হতে পারে। যেখানে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি ভোগবাদী জীবনধারা থেকে উত্তরণ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সৃজনশীল শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া আয়োজিত একটি জন-বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ভাষণ দেয়াকালে তার ‘তিন শূন্য’, অর্থাৎ শূন্য বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের ধারণার ব্যাখ্যা করেছিলেন।

গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান

ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা বন্ধে অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে, যুদ্ধ ও সংঘাতের ফলে ব্যাপক ভিত্তিতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে।

গাজার উল্লেখযোগ্য অংশ 'দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির' সম্মুখীন

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের।

ইউনূস বলেন, একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ ড. ইউনূসের

জাতিগত নিধনের শিকার জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত চাই।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চেয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া ব্যাপকভিত্তিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

৪ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেন নিজ দেশে স্বাধীন এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনধারণ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবিদার। রোহিঙ্গারা যেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাদের নিজ ভূমি রাখাইনে ফিরে যেতে পারে, তার পথ সুগম করা দরকার।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মিয়ানমারে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল অবস্থা বিবেচনায় রেখে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে প্রস্তুত।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসীদের মানবাধিকার ও তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা যে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত বিশ্বে বসবাস করছি, সেখানে অভিবাসন এবং মানুষের অবাধ প্রবাহ এক অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা। বাংলাদেশি নাগরিকেরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হিসেবে যাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ মুহূর্তে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। সবার জন্য অভিবাসনের উপযোগিতা নিশ্চিত করতে বিশ্বসমাজকে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল, নিয়মিত এবং মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসনের পথ সুগম করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিবাসীদের মানবাধিকার এবং তাদের প্রতি মানবিক আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।

২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী গেছেন জার্মানিতে

তিনি আরও বলেন, অভিবাসনের ওপর ২০১৮ সালে যে ‌গ্লোবাল কমপেক্ট অন মাইগ্রেশন গৃহীত হয়েছে, তার পূর্ণ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একই সঙ্গে অনিরাপদ অভিবাসন রোধেও আমরা বদ্ধপরিকর।

প্রতিবছর প্রায় পঁচিশ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ। এই জনশক্তিকে বর্তমান ও আগামীর জন্য গড়ে তোলা বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, ক্রমপরিবর্তনশীল কর্মজগতে (ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক) একজন তরুণকে প্রতিনিয়ত নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হয় এবং কর্মপরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শিখতে হয়। এজন্য বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হচ্ছে, তখন আমরা শিক্ষা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা লাভের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )