উজানের ঢল ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীতে গত এক সপ্তাহ থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষরা। ওই সব এলাকায় আমন ধানসহ শীতের আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
রোববার গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের ৪৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীতে ৪৭ সেন্টিমিটার, করতোয়ায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিস্তার পানি ২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। সব গুলো নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টা থেকে রবিবার বেলা ৩ টা পর্যন্ত এই পরিমাণ পানি বৃদ্ধি পায়। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ঘাঘট, করতোয়া ও ব্রহ্মপুত্র নদের বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলা, সাঘাটা ও ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে হাজারো মানুষ পানি বন্ধি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
গ্রামীন রাস্তায় পানি জমে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে কাঁচা রাস্তায় কাঁদা হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে ওই সব এলাকার মানুষ।সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ বছর দুইবার বন্যার শিকার হয়েছি। নতুন করে আবার নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে পানি। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যেই নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি উঠার শঙ্কা রয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার ভাসারপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল (৫৫) বলেন, বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। নদীর পানি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলে আমনের ধান ও শাক-সবজি সব ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আগের বন্যার ক্ষতিই পুষিয়ে উঠতে পারিনি। তাতেই ফের নদীতে পানি আসছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত শনিবার (৫ অক্টোরব) থেকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। করতোয়া, ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রোববার সকাল থেকে তিস্তার পানি কমছে। অতি বৃষ্টি আর উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও এখনো কোনো নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাল, শুকনা খাবারের প্যাকেট মজুদ রয়েছে। আমরা সার্ক্ষনিক নজর রাখছি।