1. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. [email protected] : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. [email protected] : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
সঠিকভাবে হাত না ধুলে যে রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

সঠিকভাবে হাত না ধুলে যে রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন

সকালের বাণী ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৯০ জন দেখেছেন
হাত না ধুলে যে রোগে আপনি আক্রান্ত হবেন

২০০৮ সালে প্রথমবার বিশ্বব্যাপী হাত ধোয়া দিবস পালিত হয়েছিল। সেই থেকে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’  বা ‘Global Hand Washing Day’ পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির উদ্দেশ্য হলো রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।

করোনা মহামারিতে আমরা নিয়মিত হাত ধোয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও জেনেছি। কিন্তু শুধু মহামারিতে না নিয়মিত এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে অনেক রোগ থেকেই আমরা বাঁচতে পারবো। বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নের মতো মানুষ নিয়মিত হাত ধোয়ার কারণে করোনা মহামারি থেকে বেঁচে গেছেন।

কেন হাত ধোয়া উচিত?

হাত জীবাণুমুক্ত রাখা স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম মূলমন্ত্র। সঠিকভাবে হাত ধোয়ার মাধ্যমে হাসপাতালে থাকা রোগজীবাণু দিয়ে শ্বাসযন্ত্রের এবং অন্ত্রের রোগগুলো প্রায় ৫০ শতাংশ কমানো যেতে পারে। সঠিক নিয়মে হাত ধোয়া বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি হাসপাতালে এবং বাড়িতে জন্ম প্রসবের সময় শিশু মৃত্যুর হারও হ্রাস করে।

হাত ধোয়া একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর উপায় যার মাধ্যমে আমরা অনেক রোগের সংক্রমণ রোধ করতে পারি। এটি বিশেষ করে শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা প্রায়ই বিভিন্ন জিনিস ধরে এবং হাত মুখে দেয়।

শিশুরা হাত না ধুয়ে খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, কৃমি, পানি ও খাবারবাহিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা শিশুকাল থেকেই শুরু করা উচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস ভ্যাকসিনের চেয়েও কার্যকরী হতে পারে।

কেন সঠিক নিয়মে হাত ধুতে হবে?

সারাদিন আমরা অসংখ্য জিনিস স্পর্শ করি। এই জিনিসগুলোয় বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। যখন আমরা আমাদের মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করি, তখন এই জীবাণুগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণ হতে পারে।

জ্বর, সর্দি, কাশি, ফ্লু থেকে শুরু করে আরও গুরুতর রোগ যেমন ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি, হেপাটাইটিস, টাইফয়েড এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির মতো রোগও হতে পারে।

স্বাস্থ্যকর্মীরোগী এবং রোগীর স্বজনদের জন্য হাত ধোয়া জরুরি কেন?

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে স্পর্শ করেন। তাদের হাতে থাকা রোগজীবাণু একজন রোগীর শরীর থেকে থেকে অন্য রোগীর শরীরে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এটি হাসপাতালে রোগ সংক্রমণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের জন্য এই সংক্রমণ আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

হাসপাতালের টয়লেটে পানি ও সাবানের ব্যবস্থা না থাকলে রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও রোগজীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। টয়লেট ব্যবহারের পর হাত না ধোয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু হাতে লেগে থাকতে পারে। এই জীবাণুগুলো পরে খাবার খাওয়া বা অন্য কোনো জিনিস স্পর্শ করার মাধ্যমে নিজের না অন্যদের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

টয়লেটে সঠিক পরিচ্ছন্নতা না থাকলে ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি, জ্বর, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-‘এ’ এবং ‘ই’ জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে কেবল পাকস্থলীজনিত রোগই নয়, ত্বকের সংক্রমণ, চোখের সংক্রমণ ইত্যাদিও হতে পারে। তাই হাসপাতালের প্রতিটি টয়লেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ সাবান এবং পানির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

পাশাপাশি রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হাত ধোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এর জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়া সংক্রান্ত পোস্টার, লিফলেট লাগাতে হবে এবং মৌখিকভাবেও তাদের সচেতন করতে হবে। এছাড়াও হাসপাতালের টয়লেটসহ সব এলাকা নিয়মিত টয়লেট ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

কী ধরনের উপকরণ দিয়ে হাত ধুতে হবে?

পানি ও সাবানের পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে হবে। হাতে দৃশ্যত কোনো ময়লা থাকলে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে ৩০-৪০ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করে প্রবাহমান পানতে ধুতে হবে। কারণ হাত খুব বেশি ময়লা হলে বা হাতে ময়লা থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আমাদের হাত থেকে সব জীবাণু এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে পারে না।

তবে ময়লা না থাকলেও স্যানিটাইজার ব্যাবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্যানিটাইজার দিয়ে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে সঠিক নিয়মে হাত ধুতে হবে। তবে সাবান বা স্যানিটাইজার যেটাই ব্যাবহার করা হোক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে হাত ধোয়ার ৬টি ধাপ মেনেই হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম এবং নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা খুব জরুরি। না হলে হাত পুরোপুরিভাবে জীবাণুমুক্ত হবেনা।

কী নিয়মে হাত ধোয়া উচিত?

১। পানি দিয়ে হাত ভেজান: গরম বা ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে নিন।

২। সাবান ব্যবহার করুন: তরল বা বার সাবান ব্যবহার করে হাতের সামনে, পেছনে, হাতের তালুর ভাঁজ, আঙুলের মাঝখানে, কবজি এবং নখের নিচে ভালো করে ঘষুন।

৩। কমপক্ষে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে ঘষুন: একটি গান গাইতে গাইতে বা  গুনতে গুনতে ২০-৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ঘষুন।

৪। পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন: পানি দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

৫। তোয়ালে দিয়ে মুছুন: একটি পরিষ্কার তোয়ালে বা টিস্যু দিয়ে হাত মুছুন বা বাতাসে শুকিয়ে নিন।

কখন হাত ধোয়া উচিত:

  • খাবার খাওয়ার আগে ও পরে।
  • খাবার পরিবেশনের আগে ও পরে।
  • রান্না করার আগে ও পরে।
  • খাবার তৈরির সময় বিশেষ করে কাঁচা মাংস বা মাছ ছোঁয়ার পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • টয়লেট ব্যবহারের পর: টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়া মলদ্বারের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।
  • নাক, মুখ বা চোখ ছোঁয়ার আগে: নাক, মুখ বা চোখ (T-zone) ছোঁয়ার আগে হাত ধোয়া এই অংশগুলোয় জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
  • ঘা বা ক্ষত স্পর্শ করার আগে বা পরে: ঘা বা ক্ষত স্পর্শ করার আগে বা পরে হাত ধোয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
  • অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যাওয়া বা স্পর্শ করার পর: অসুস্থ ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের পর হাত ধোয়া তাদের কাছ থেকে জীবাণু সংগ্রহ করার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
  • যেকোনো বস্তু ছোঁয়ার পর যা অনেক মানুষ ছুঁয়ে থাকে: দরজার হাতল, বাসের হাতল বা অন্য কোনো স্পর্শকাতর জিনিস ছোঁয়ার পর হাত ধোয়া জীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।
  • হাসপাতালের ক্ষেত্রে: রোগীকে স্পর্শ করার আগে ও পরে, রোগীর বিছানা বা চারপাশ স্পর্শ করার পরে, যেকোনো অপারেশনের আগে ও পরে, রোগীর শরীরের কোনো তরল পদার্থ স্পর্শ করার পরে।
  • যেকোনো পশু-পাখি অথবা এদের খাবার বা বিষ্ঠা ধরার পর।
  • মুরগি, হাঁস বা গৃহপালিত পাখির মাংস, কাঁচা ডিম ও সী-ফুড ধরার পর।
  • ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার পরে অবশ্যই সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।

হাত জীবাণুমুক্ত রাখা স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি মূলমন্ত্র। বিশেষ করে হাসপাতালের মতো জায়গায় এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সবারই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসারে, হাত ধোয়া স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অভ্যাস। সবারই এই অভ্যাসটি গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখতে চলুন আজ থেকেই হাত ধোয়ার অভ্যাস শুরু করি।

ডা. কাকলী হালদার ।। সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )