কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে ইরি ধানের পরিবর্তে ভূট্টা চাষ হচ্ছে। বিগত চার বছর থেকে চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়েছে ভূট্টা চাষ। কৃষকেরা জানান, চরাঞ্চলগুলোতে ইরি ধানের পরিবর্তে ভূট্টা আবাদ জায়গা করে নিয়েছে । চরের এমন কোনো জমি নেই যেখানে ভূট্টা চাষ হচ্ছে না। বালু মাটি কিংবা নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তরণ ঘটেছে এ আবাদ। ইরি আবাদে সেচ দেয়া ছিলো চেলেঞ্জের বিষয়। প্রতি বিঘা জমিতে ৬০ লিটার ডিজেল লাগতো সারা মৌসুমে। এছাড়া হালচাষ, সার, কৃষান, বীজ সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতো।
সেক্ষেত্রে উৎপাদন কম হতো। ধান চাষ করে লাভের চেয়ে ক্ষতিতে পড়তেন কৃষক। গত চার বছর আগে চরে ভূট্টার আবাদ শুরু হয়। প্রথমে কিছু কৃষক ভূট্টার চাষ করে লাভবান হন। পরের বছর বাড়তে থাকে চাষের পরিমান। এ বছর প্রায় সব চরাঞ্চলে চাষ হচ্ছে ভূট্টা। ভূট্টা চাষে লাভ বেশী। এক বিঘা ভূট্টা চাষে সব মিলে খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। আর উৎপাদন ভালো হলে ৩৭ থেকে ৪০ মণ ভূট্টা পাওয়া যায়। বাজারে ভূট্টার দাম ভালো। বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
এতে দ্বিগুন লাভ পায় কৃষক। ভূট্টা চাষে দিন বদল হয়েছে চরের কৃষকদের। দরিদ্রতার বেড়াজাল থেকে বের হচ্ছেন তারা। এখন চরাঞ্চলের প্রায় কৃষক সচ্ছল।
বল্লভের খাষ ইউনিয়নের চর কৃষ্ণপুর এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষ করেছেন। ইতিপূর্বে ইরি ধান চাষ করলেও লাভ হতো না। প্রতিবছর লোকশানে থাকতেন তিনি। তিন বছর থেকে ভূট্টা চাষ করে লাভবান হয়েছেন তিনি। সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে এখন।
একই এলাকার কৃষক হবিবর রহমান, আবুল হোসেন জানান, ভূট্টা চরাঞ্চলের কৃষকদের মঙ্গল বয়ে নিয়ে এসেছে। চরের কৃষকরাই প্রথম এ আবাদ শুরু করে। এ ফসল আবাদ করে চরের মানুষের অভাব ঘুচেছে। আমন মৌসুমে সংসারের প্রয়োজন মোতাবেক ধান আবাদ করা হয়। ইরি মৌসুমে ধানের পরিবর্তে ভূট্টা চাষ করা হয়।
প্রথম দিকে কৃষক নিজ উদ্যোগে ভূট্টা চাষ করলেও এখন এগিয়ে এসেছে কৃষি বিভাগ। বীজ সার দিয়ে প্রান্তিক কৃষকদের সহযোগীতা করছে দপ্তরটি। নাগেশ্বরী কৃষি দপ্তর সুত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১৬শ ৮০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ হয়েছে। এবার ভূট্টা চাষে ৩শ কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, চরাঞ্চলের বালু এবং দোয়াশ মাটিতে ভূট্টার আবাদ ভালো হয়। ভূট্টা লাভজনক ফসল। তাছাড়া স্থানীয় আবহাওয়ার সাথে ভূট্টা চাষ খাপ খেয়ে গেছে ফলে কৃষকেরা ভূট্টা চাষে ঝুকছেন। উপজেলার চরাঞ্চলে ভূট্টার চাষ বেশী হচ্ছে।