দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত একটি উপজেলা খানসামা। সেখানে থাকা একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সেবা নেন ৭ থেকে ৮ শতাধিক উপজেলার নাগরিক। উপজেলার নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নীত অবকাঠামো উদ্বোধন করা হলেও জনবল ৩১ শয্যার রয়েছে। বিগত ৪ বছর পেরিয়ে গেলে ও ৫০ শয্যার হাসপাতালের প্রশাসনিক অনুমোদন হওয়ায় পরে ও লোকবল নিয়োগ না হওয়ায় চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়ন হয়নি। সেই আগের ৩১ শয্যা হাসপাতাল কাঠামোতে যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তাও নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন ধরেই জনবলের এই সংকট লেগে থাকলেও নেই কোনো সমাধান।
৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কাঠামোতে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ চিকিৎসক পদ রয়েছে ১৬ টি। সেই পদে ও লোকবল নেই। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১ জন ,১ জন মেডিকেল অফিসার ,১জন আর এম ও ,১ জন ডেন্টাল সার্জন ,১ জন এনেস্থিসিয়া কনসালটেন্ট এবং ১ জন গাইনী কনসালটেন্ট ডেপুটেশনে নীলফামারী মেডিকেলে দায়িত্ব পালন করছেন সপ্তাহে ১ দিন খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। আর সে কারণেই আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র রোগীরা। এ হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এবং চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী। এতে চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ রোগী এবং রোগীর স্বজনরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ২য় শ্রেণী ৩৭ পদের মধ্যে রয়েছে ৩৭জন। ৩য় শ্রেণী ৮২ পদের মধ্যে ৫৪ জন। ৪র্থ শ্রেণী ২১ পদের মধ্যে ১০ জন। ডাঃ সহ মোট ৪৯ শুন্য পদ রয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই এসেছেন চিকিৎসা নিতে। উপচে পড়া ভিড় দেখে অনেকে সেবা না নিয়ে রেগে গিয়ে চলেও যাচ্ছেন। অনেকে অপেক্ষা করছেন সিরিয়ালের জন্য। আবার অনেকে ভর্তি হচ্ছেন।উপজেলার সচেতনমহল বলেন, চিকিৎসক সংকটে রোগীদের ভোগান্তি সহ চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এভাবে একটি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চলতে পারে না। তাই অতি শীঘ্রই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে চিকিৎসক পদায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, আমরা আউটডোরে প্রায় ৪০০-৫০০রোগী দেখি। সংখ্যাটা আসলেই ঈর্ষণীয়। এ রোগীগুলোকে ভাল সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জনবল প্রয়োজন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এই শূন্যতার মধ্যেই সেবার মান বজার রাখার কিন্তু পারছি না। জনবল না পাওয়ায় চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ আর আমরাও হিমশিম খাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল প্রশাসনিক অনুমোদন হয়েছে কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সংকট রয়েছে। চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে আগত রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসকসহ জনবল সংকট দূরীকরণে উপর মহলে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনও পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে চিকিৎসা সেবা আরও এগিয়ে নেয়া যাবে।