
অসহায়- দূস্থ পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০ (দশ) কেজি ভিজিএফ চাল, বিধবা ভাতা, বসয়স্ক ভাতা প্রদান সরকারের প্রশংসিত পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়ে আসছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উমর গ্রামে বছরের পর বছর ধরে চলছে দুর্নীতির এক নিরব উৎসব। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ঝর্ণা বেগমের বিরুদ্ধে উঠেছে ভিজিএফ চাল, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা আত্মসাতের একের পর এক ভয়াবহ অভিযোগ।
স্থানীয়দের দাবি, ঝর্ণা বেগম দীর্ঘদিন ধরে অসহায় ও দরিদ্র জনগণের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজের ঘৃণ্য স্বার্থসিদ্ধি করে চলেছেন। প্রতিবাদ করলেই ভুক্তভোগীদের মুখে ঠাঁই পাচ্ছে ভয়ভীতি, হুমকি এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা।
সম্প্রতি উমর গ্রামের বাসিন্দা জনৈক পঙ্গু নাজমুল ইসলাম নামীয় ব্যক্তি গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন, যেখানে রয়েছে একাধিক ভুক্তভোগীর গণস্বাক্ষর।
অভিযোগে বলা হয়, বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল বিতরণের তালিকায় নাম থাকলেও অনেকেই চাল পাননি।
নাজমুল ইসলাম বলেন, “আমার নাম তালিকায় ছিল। কিন্তু চাল পাইনি। লোক মারফত জানতে পারি, আমার নামে চাল উঠেছে, অথচ আমি কোনো স্লিপ পাইনি। ইদের আগে ১০ কেজি চাল পেলে একদিন নিশ্চিন্তে খেতে পারতাম, কিন্তু সেটাও জোটেনি।আমার স্লিপের চাল গেল কোথায়?”
তার মতো একই অভিযোগ করেছেন শাহাজুল ইসলাম , ছাবেরা বেগম , মমতাজ বেগমসহ আরও অনেকেই। কেউ কেউ জানান, চাল তুলতে গেলে বলা হয় ‘স্লিপ নাই’, আবার কারও চাল অন্য কেউ তুলে নিয়েছে—এমন অজুহাতও দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিধবা ও বয়স্ক ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র। অভিযোগ রয়েছে, ভাতার কার্ড ও ৪০ দিনের কর্মসূচির কাজে নাম লেখাতে হলে দিতে হয় ঘুষ।
বিধবা রওশনারা বেগম অভিযোগ করেন, ৪০ দিনের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা এবং বিধবা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে আরও ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কাজ বা ভাতা কিছুই তিনি পাননি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন তিনি। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। সরাসরি তার বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, “মোক বেইজ্জত করেন না ভাই। বাড়াবাড়ি করিস না। মোর ইজ্জত ছাড়া তোমার ইজ্জত যাবার নয়।”
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, এছাড়াও ইউপি সদস্য ঝর্ণা বেগমের বিরুদ্ধে অতীতেও একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।২০২২ সালের ৯ নভেম্বর নাজরিন বেগম তার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির রেশন কার্ডের চাল আত্মসাতের অভিযোগ করেন।২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর মোসলেমা বেগম অভিযোগ করেন, তার বয়স্ক ও বিধবা ভাতার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
উভয় অভিযোগই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় অভিযোগকারীদের ভয়ভীতি ও মামলার ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য করা হয়।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজীবুল করিমকে ইতিমধ্যেই দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Related