সকাল থেকেই কারাগারের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। বন্দিদের জন্য পরিবেশন করা হয় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান্তা ইলিশ। দীর্ঘ কারা জীবনে এমন আয়োজন বন্দিদের মনে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। একইসাথে, এদিন কারাগারে আসা স্বজনদেরও পান্তা ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়, যা ছিল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য।
জেলার শাহরিয়ার আলম চৌধুরী এই প্রসঙ্গে বলেন, “নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমরা চেয়েছি, বন্দিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যারা এই বিশেষ দিনে এখানে এসেছেন, তারাও এই আনন্দের অংশীদার হোন। পান্তা ইলিশ আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সকলের মাঝে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি।”
এছাড়াও, কারাগারে আগত বন্দি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য একটি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। যেখানে সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই উদ্যোগটি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নববর্ষের এই বিশেষ দিনে কারাগারে তাদের প্রিয়জনদের সাথে দেখা করতে আসা কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
শাহানাজ বেগম, যিনি তার ভাইকে দেখতে এসেছিলেন, বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি কারাগারে এসে পান্তা ইলিশ খাব। এই আয়োজন সত্যিই অসাধারণ। আমার ভাইয়েরাও খুব খুশি হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ আমাদের খুব ভালো লেগেছে।”
আরেকজন দর্শনার্থী, আব্দুল করিম, যিনি তার ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন, “কারাগারের ভেতরে এত সুন্দর একটা উৎসবের পরিবেশ শুনে আমি অভিভূত।
বন্দিদের সাথে দেখা করতে আসা রহিমা খাতুন বলেন, “আজ এখানে এসে মনেই হয়নি এটা কারাগার। সবাই হাসিখুশি। পান্তা ইলিশের আপ্যায়নও খুব আন্তরিক ছিল। কারা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি দিন উপহার দেওয়ার জন্য।”
কারা সূত্রে আরও জানা যায়, নববর্ষ উপলক্ষে বন্দিদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়, যেখানে বন্দিরা গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটকের মতো পরিবেশনায় অংশ নেয়। এই ধরনের কার্যক্রম বন্দিদের মানসিক চাপ কমাতে এবং তাদের মধ্যে সামাজিক মেলবন্ধন তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারের এই ব্যতিক্রমী নববর্ষ উদযাপন বন্দি জীবন এবং সমাজের মূল স্রোতের মধ্যে একটি ইতিবাচক সংযোগ স্থাপন করেছে।