1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
গঙ্গাচড়ায় এক হাজার শয্যার চীন - বাংলাদেশ মৈত্রী  হাসপাতাল, স্বপ্নের সেতুবন্ধন  | দৈনিক সকালের বাণী
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন

গঙ্গাচড়ায় এক হাজার শয্যার চীন – বাংলাদেশ মৈত্রী  হাসপাতাল, স্বপ্নের সেতুবন্ধন 

মাহফুজার রহমান, গঙ্গাচড়া ( রংপুর)
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৭২ জন দেখেছেন
রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের জমি ঘিরে আশাবাদী স্থানীয়রা। তিস্তা সেতুর সন্নিকটে অবস্থিত এই স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ, যোগাযোগব্যবস্থা এবং সামাজিক গুরুত্ব হাসপাতাল স্থাপনের জন্য একে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় করে তুলেছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন তিস্তা তীরবর্তী মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত প্রাণের দাবী হলেও সেই দাবী পূরণে কিছুদিন আগে বৃহৎ কর্মসূচি “আইসো বাহে তিস্তা বাঁচাই ” অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেই কর্মসূচির ফলাফল এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও তিস্তা পারে ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট চীন – বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা সেই স্বপ্নের সেতুবন্ধন হিসেবেই ধরা দিয়েছে।
আলোচিত হাসপাতাল নির্মাণ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকায় প্রস্তাবিত স্থানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট শহিদুর রহমান খন্দকার, সাবেক সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট ইকোনমিস্ট ফরহাদ আহমেদ, রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল ফয়সাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী এবং অন্যান্য স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণঅধিকার  উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজিবসহ জনপ্রতিনিধিরা।
চীন – বাংলাদেশ মৈত্রী  হাসপাতাল  নির্মাণের  পরিকল্পনাকে ঘীরে স্থানীয়রা ভাবছেন, চীনের এই মহৎ উদ্দেশ্য  নিসন্দেহে রংপুর অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ। ১ হাজার শয্যার আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের মানুষের উন্নত চিকিৎসার
 ক্ষেত্রে যেমন অসামান্য অবদান রাখবে, তেমনি এই অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব নিরসন, ব্যাবসা – বাণিজ্যের প্রসার , যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কলকারখানা স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তারা বলছেন,যদি এটি মহিপুরের পরিদর্শনকৃত চর কলাগাছিতে নির্মিত হয় তাহলে অবস্থানগত দিক থেকে যেমন বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে খুব কাছে,  তেমনি বৃহত্তর রংপুরের নীলফামারী, লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার মাঝামাঝি হওয়ায়, নির্বিঘ্নে সড়ক ও নৌ পথ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি উপযোগী নিস্কন্টক খাস ২৯ একরের বেশি প্রয়োজনীয় জায়গা ব্যবহারের সুবিধা। পরিদর্শনকৃত মহিপুরের চর কলাগাছিতে আলোচিত হাসপাতালটি নির্মাত হলে নদী শাসন ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গঙ্গাচড়া উপজেলা বিভাগীয় শহর  রংপুর হতে যেমন খুব কাছে তেমনি প্রস্তাবিত মহিপুর চর কলাগাছির উত্তরে  অবস্থানগত দিক থেকে লালমনিরহাট জেলা,  উত্তরপূর্বে কুড়িগ্রাম জেলা, দক্ষিণপূর্বে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিম দক্ষিণে দিনাজপুর জেলা, পশ্চিমে নীলফামারী, উত্তর পশ্চিমে ঠাঁকুরগা ও পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত হওয়ায় প্রস্তাবিত গঙ্গাচড়া মহিপুর বিশেষ প্রাধান্য বহন করে।
উন্নত যোগাযোগব্যবস্থাঃ
মহিপুর এলাকা সড়ক ও নৌপথে রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলার সঙ্গে নির্বিঘ্ন সড়ক যোগাযোগ  সংযুক্ত। এতে করে রোগী, চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জন্য যাতায়াত সহজ ও স্বল্প ব্যয়সাধ্য হবে। তাছাড়া বিভাগীয় সদর ও রাজধানীর সঙ্গে এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগও উন্নত, ফলে ঔষধ, যন্ত্রপাতি ও জরুরি সেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত এলাকায় ১’শ একর খাসজমি ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সুযোগঃ
এলাকায় প্রচুর পরিমাণে সরকারি খালি জমি রয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে হেলিপ্যাড, আবাসন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণাগার কিংবা একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা সম্ভব।
ভারতের উপর নির্ভরতা হ্রাসঃ
প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। একটি আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হলে এই নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং দেশেই উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
প্রাকৃতিক ও মানসিক প্রশান্তিঃ
তিস্তা নদীর পাড়ে সবুজে ঘেরা পরিবেশ রোগীদের মানসিক প্রশান্তি ও দ্রুত আরোগ্যে সহায়ক হবে। শব্দ ও বায়ুদূষণ মুক্ত এই স্থান একটি আধুনিক হাসপাতালের জন্য আদর্শ পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান করে ।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথকে সুগম করবে  :
প্রস্তাবিত হাসপাতাল স্থাপন তিস্তা নদীকে ঘিরে সরকারের যে, তিস্তা  মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বৃহৎ  চিন্তা রয়েছে  তার সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে এটি একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবেও আলোর পথ রচিত হবে ।
দরিদ্র ও দুর্যোগপ্রবণ মানুষের উপকারঃ
রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাঁকুরগা ও পঞ্চগড় জেলার মধ্যবর্তী অবস্থান হওয়ায় এই এলাকাটি বিশেষ দাবি রাখে।পাশাপাশি রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা এই চারটি জেলা সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত ও দরিদ্র অধ্যুশিত হওয়ায় মহিপুর প্রায় এই চার জেলার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত হওয়ায় এসব জেলার দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
বন্যামুক্ত নিরাপদ এলাকাঃ
যদিও আলোচিত এলাকাটি নদীর পাশে, তবে প্রস্তাবিত স্থানটি তুলনামূলক উঁচু জায়গায় হওয়ায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি কম।
চিকিৎসা ও পর্যটনের সম্ভাবনাঃ
আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে শুধু দেশের উত্তরাঞ্চল নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও মানুষ চিকিৎসা নিতে আসবে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙা হবে।
রংপুর মেডিকেল কলেজের সংযোগে চিকিৎসক সংকট কমবেঃ
রংপুর মেডিকেল কলেজের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ থাকায় অভিজ্ঞ চিকিৎসক সহজ লভ্যতা নিশ্চিত  হবে।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, চীন- বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল তিস্তা পারের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি)  জান্নাতুল ফেরদৌস উর্মি বলেন, গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরের চর কলাগাছি নামক এলাকাটি নিসন্দেহে বৃহত্তর  উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী অবস্থানে হওয়ায় এই এলাকাটি চীন – বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল নির্মাণের বিশেষ দাবি রাখে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, আমি চাকুরীর সুবাদে গঙ্গাচড়ার মানুষের জীবনাচার খুব কাছ থেকে দেখছি। তিস্তা বিধৌত উত্তরের চার জেলার মানুষের আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা,ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন – বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল বিশেষ তাৎপর্য বহন করবে।
রংপুরের স্থানীয় জনগণের দাবি , মহিপুরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল স্থাপন করা হলে তা শুধু আধুনিক চিকিৎসা সেবা দেবে না, বরং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। “কাউকে পিছনে ফেলে নয়”—এই নীতিকে সামনে রেখে বাস্তবায়িত হলে এই হাসপাতাল হতে পারে সমতাভিত্তিক উন্নয়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )