“বিশ্বকে বদলে দিতে, বিকশিত হই আনন্দের সাথে” এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের আনন্দের সাথে লেখাপড়া নিশ্চিত করতে এবং স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া বন্ধ করতে ১৬০টি স্কুল প্রাঙ্গণে ১টি করে প্লে গ্রাউন্ড স্থাপনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন টাঙ্গাইলের বিদ্যানুরাগী জেলা প্রশাসক শরীফা হক। প্রতিটি স্কুলে একটি করে দোলনা, স্লীপার, ব্যালেন্সার, বাসকেট বল, প্রজাপতি ফটো ফ্রেম, রোপ ল্যাডার ও বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার খাগজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্লে গ্রাউন্ডের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার মহন্ত, টাঙ্গাইল পৌরসভার সিইও আনিসুর রহমান, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মিয়া, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেওয়ান আসিফ পেলে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিন, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।
এ সময় জেলা প্রশাসক শরীফা হক বলেন, একটি জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে শিশুরা। আর তাই পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, সত্য এবং শুদ্ধতার মধ্যে দিয়ে শিশুদের বড়ো করে তোলা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটে তখনই যখন তারা আনন্দের সাথে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।মূলত শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সর্বোচ্চ বিকাশ নিশ্চিত করতে এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ করতেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই প্লে গ্রাউন্ড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে তারা যেন সবসময় নিজের দেশকে হৃদয়ে লালন করে এবং দেশকে ভালোবাসতে শেখে সেজন্য প্লে গ্রাউন্ডের পাশাপাশি তাদের জন্য বাংলাদেশের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ শিশু সুষ্ঠু বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ থেকে বঞ্চিত। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। আমার চাওয়া আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুরাও যেন আমাদের সীমিত সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে আনন্দে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। আমার বিশ্বাস আমরা যদি শিশুদের প্রতি একটু যত্নশীল হই, তারা বিকশিত হবে আদর্শ, কর্মক্ষম, সুযোগ্য সুনাগরিক হিসেবে। সেই সুনাগরিক যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল, পরিবেশ সচেতন এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ। আমরা আনন্দের সাথে শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলে আক্ষরিক অর্থেই তারা আমাদের সম্পদ হয়ে উঠবে। এই শিশুরাই এক সময় এদেশের প্রতিটি সেক্টরে অসাধারণ অবদান রাখবে, দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি স্কুলে বাংলাদেশের মানচিত্র সম্বলিত ম্যুরাল নির্মাণেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছুদিন পূর্বে, শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে “একটি শিশু একটি স্বপ্ন ফুলের সাথে বিকশিত হোক আগামীর প্রজন্ম” এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জেলার ১৬২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৩টি করে দৃষ্টিনন্দন ফুলের ৪৮৬৯টি গাছ কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু চারা রোপণ করেছেন জেলা প্রশাসক শরীফা হক। শিশুদের মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তাঁদের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছেন।