নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজটি আধা যুগেরও (৮ মাস) বেশি সময় ধরে অধ্যক্ষ বিহীনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত আছে, অধ্যক্ষের পদ শূন্য হলে ছয় মাসের মধ্যে ওই পদে লোক নিয়োগ দিতে হবে। অভিযোগ আছে, কলেজটিতে একজন উপাধ্যক্ষ থাকলেও তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি অধ্যক্ষের। বর্তমানে স্কুল শাখার একজন শিক্ষক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ১৯৮৩ সালে নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থা লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫ এ ২ বাংলাদেশ এর অধীনে লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা এমপিওভূক্ত হলেও কলেজ শাখাটি ননএমপিওভূক্ত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশেষ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে এটি।
গত ২০০৯ সালে স্কুলটিকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেয়াজুল আলম রাজু অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালে তাঁর বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়। পরবর্তীতে দুই বছর তাঁর চাকরির মেয়াদ বর্ধিত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয় এবং দুই বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে তিনি ২০১৮ সালে ১২ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এরপর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান কিশোর। অবসরে যাওয়ার পর তিনিও বিগত ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার সিনিয়র শিক্ষক শফিয়ার রহমান সরকারকে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি (শফিয়ার রহমান) ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে সময় বৃদ্ধি করে শফিয়ার রহমান সরকারকে আরো দুই বছরের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) আপত্তি তুলে একটি পত্র প্রদান করে। এমপিওভূক্ত নীতিমালায় শফিয়ার রহমান সরকারের বয়স ৬০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিত তিনি কিভাবে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ওই চিঠি দেওয়া হয়। মাউশির সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাস গত ২৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কাছে ওই ব্যাখ্যা চান।
এতে টনক নড়ে গভর্ণিং বডির। তারা তড়িঘড়ি করে ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর কলেজটির উপাধ্যক্ষ থাকা সত্ত্বেও স্কুল শাখার এমপিওভূক্ত আরেক সহকারী শিক্ষক মো. মসিউর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক -৩ শাখা থেকে অধিদপ্তরে জারিকৃত নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত জ্যেষ্ঠ প্রভাষক অথবা সহকারী অধ্যাপককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। কিন্তু লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে সে নীতিমালা প্রতিপালন করা হয়নি। এছাড়াও গত ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক কর্মচারীর বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে কোন অবস্থাতেই তাঁর চাকরি বর্ধিত করা যাবে না। কিন্তু কোন কিছুই মানা হয়নি এ প্রতিষ্ঠানে। ২০১৬ সাল থেকে চলছে চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে।
অভিযোগ মতে, পরিচালনা কমিটির (গভর্ণিং বডি) তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে স্কুল শাখার একজনকে অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্বভার দিয়ে আসছেন। এদিকে অনিয়ম ও দূর্নীতি কারণে গত বছরের ৩০ নভেম্বর তারিখে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু সায়েম তাঁর এক পত্রে এ কমিটিকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য কারণ দর্শায়। জানা গেছে, তাঁরও কোন উত্তর দেয়নি কলেজ গভর্ণিং বডি। অথচ একই গভর্ণিং বডির সভাপতি হিসেবে মাউশি কর্তৃক দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শফিয়ার রহমান সরকারকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড।
শফিয়ার রহমান সরকার সভাপতি হওয়ার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় গত ১১ সেপ্টেম্বর তড়িঘড়ি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকার ১০টি পদে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। অথচ দীর্ঘ ৮ বছর ধরে অধ্যক্ষ না থাকলেও অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি এবং কখনও ওই পদে নিয়োগের উদ্যোগও নেই এ প্রতিষ্ঠানের গভর্ণিং বডি।
এ নিয়ে কথা হলে গভর্ণিং বডির সভাপতি শফিয়ার রহমান সরকার জানান, ‘খুব শিগগিরই আমরা অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অধ্যক্ষ নিয়োগ করবো’। কলেজের উপাধ্যক্ষ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব না দিয়ে কেন স্কুল শাখার শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখা এমপিওভূক্ত। কিন্তু কলেজ শাখা ননএমপিওভূক্ত, তাই স্কুলের এমপিওভূক্ত শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।