নীলফামারীর সৈয়দপুরে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ কিলোমিটার (টেন কে) ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সৈয়দপুরের পার্শবতী দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নে সোনাপুকুর এলাকায় ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
“সুস্থতার জন্য দৌঁড়, সবাইকে নিয়ে দৌঁড়” শ্লোগানকে সামনে রেখে সৈয়দপুর রানার্স নামের একটি সংগঠন ওই দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন সৈয়দপুরের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. কামরুল হাসান সোহেল। আর এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল সৈয়দপুর কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতাল ও ফিনিক্স ক্লাব।
ঘড়ির কাটা ঠিক সকাল ছয়টায় ঘরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এ ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা। বাঁশি বাজিয়ে দৌঁড় প্রতিযোগিতার শুভ সূচনা করেন ম্যরাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতার রেস মার্শাল আমানুল হক আমান। এর আগে ম্যরাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। বেলুন উড়িয়ে এর শুভ উদ্বোধন করেন নীলফামারী -৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক ও সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকী। এ সময় সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মো. সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা বেগম, সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল সৈয়দ শাফিউল ইসলাম মেরাজ , রেস ডিরেক্টর ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেল, পার্বতীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায়, চিরিরবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত খানসহ অন্যান্যরা। এ সময় ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল, আয়রন ম্যান ইমতিয়াজ এলাহী,সাংবাদিক এম আর আলম ঝন্টু, এম এ করিম মিস্টার, তোফাজ্জল হোসেন লুতু, রেজা মাহমুদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতা সৈয়দপুরের পার্শবতী দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ইউনিয়নের সোনাপুকুর, বেনিরহাট ও ক্যানেল বাজার মোড় ঘুরে পুনরায় সোনাপুকুরে এসে শেষ হয়। চলতি বাংলা সনের মধ্য আশ্বিনের বৃষ্টিস্নাত সকালে আয়োজিত এ দৌঁড়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে আগত সাত শতাধিক নানা বয়সী ও পেশার নারী পুরুষ অংশ নেন।
এ সময় তাঁরা সকলেই একই রঙের ও ডিজাইনের টি-শার্ট পরিধান করেন অংশগ্রহনকারীরা। আর অতিথি ও ভলান্টিয়ারদেও পরণে ছিল আলাদা টি-শার্ট। ফলে গ্রামীণ সড়কে দৌড়বিদদের সরব উপস্থিতি এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করে। এ দৌঁড় প্রতিযোগিতা স্বচক্ষে দেখতে এলাকার সব বয়সী মানুষজন রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় তারা হাত উঁচিয়ে করতালি দিয়ে অংশ গ্রহনকারীদের উৎসাহ যোগান। ম্যারাথন দৌঁড়ে অংশগ্রহনকারীদের জন্য দেড় কিলোমিটার পর পর কয়েকটি পয়েন্টে পানি, জুস, কলা, খেঁজুর, চকলেটসহ অন্যান্য হালকা খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। আর এতে সার্বিক সহযোগিতায় নিয়োজিত ছিল স্বেচ্ছাসেবী ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা। ম্যারাথন দৌঁড়ে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সর্বনিম্ন ৩৭ মিনিট ১১ সেকেন্ড সময় লাগে।
এ প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহনকারীদের আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে মেডেল ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে। স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মো. সিদ্দিকুল আলম ও আয়োজক সংগঠন সৈয়দপুর রানার্স এর কর্ণধার সৈয়দপুর এর বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেল নিজ হাতে ম্যারাথন দৌঁড়ে অংশগ্রহনকারীদের হাতে মেডেল ও ক্রেস্ট তুলে দেন। এ সময় অংশ গ্রহনকারীরা ম্যারাথন দৌঁড় ও আয়োজন সম্পর্কে তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আর এ ধরণের একটি সুশৃংখল ও বিশাল আয়োজনের জন্য আয়োজন সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেলসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
দৌড়ে অংশ নিয়ে আয়রনম্যান হিসেবে খ্যাত ইমতিয়াজ এলাহী তাঁর তাৎক্ষণিক অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, শুধু সৈয়দপুর নয়, সারাদেশে দৌড় ও একটিভ লাইফস্টাইলকে জনপ্রিয় করতে সৈয়দপুর রানার্স যে অবিশ^াস্য ভূমিকা রাখছে, এ জন্য আমি এই কমিউনিটির সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানায়। দৌড়ের মাধ্যমে সুন্দর ও সুস্থ জীবনযাপনে তাদের কমিউনিটির কার্যক্রম সব বয়সী মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে উৎসাহিত করছে। এক সময় এলাকাভিত্তিক উদ্যোগ হিসেবে যা শুরু হয়েছিল তা এখন একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সারা দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে।
১০ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজক তথা আয়োজক সংগঠন সৈয়দপুর রানার্স এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেল জানান, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। প্রতিটি মানুষের শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য নিয়মিত দৌড় কিংবা হাঁটাচলা করা অপরিহার্য। এটি একটি বড় মহৌষধও। আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে দৌড় কিংবা হাঁটাচলার কোন বিকল্প নেই। তাই দৌঁড় কিংবা হাঁটাচলায় সব বয়সী মানুষকে আগ্রহী ও উৎসাহ যোগাতে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস তথা আয়োজন। তিনি সকলের সার্বিক সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে পেরে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।