বাড়তি দামের চাপে যখন ভোক্তাদের পকেটে টান পড়ে যাওয়া শুরু তখন সরকারের পক্ষ থেকে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতি ডজন ডিম ১৪২ টাকা ও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকায় কেজি দরে বিক্রির ঘোষণা দেয় কৃষি বিপণন অধিদফতর। কিন্তু মাস হতে চললেও বেঁধে দেওয়া সেই দামে ডিম-মুরগি কিনতে পারছেন না ভোক্তারা। রাজধানীর কোনো বাজারেই শুরু থেকে ডিম-মুরগির দাম নির্ধারিত মূল্য পণ্য মিলছে না। ডিমের ডজন ছুঁয়েছে ১৮০ টাকা। ফলে দামের চাপে পিষ্ট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে।
এদিকে দাম বেঁধে দেয়ার বিষয় দেখভাল ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম তদারকি করলেও খুব একটা কাজে আসছে না। প্রয়োজনের তুলনায় অভিযানও হচ্ছে কম। অভিযান পরিচালনার সময় কোনো কোনো ব্যবসায়ীকে জরিমানা করলেও তাতে বাজার পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে না।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সিন্ডিকেট করে যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠবে।
ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেঁধে দেওয়ার সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই দাম ঠিক করা হয়েছে।
কিন্তু বাজারে ডিম কিনতে গিয়ে ক্রেতারা নির্ধারিত দামে যেমন একদিকে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না, অন্যদিকে কেন দাম বাড়ছে তা নিয়েও কেউ সদুত্তর দিতে পারছেন না। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি টিম বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীতে বাজার তদারকি করে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অভিযানে চাল, ডাল, ডিম, আটা, কাচা মরিচ, সবজি, মাছ ও মুরগির বাজারে তদারকি করা হয়। এসময় গত কয়েক দিনের তুলনায় ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর দাম কিছুটা কম বলে দেখতে পায় অভিযান পরিচালনাকারী দল।
তদারকি টিমের নেতৃত্ব দেওয়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বনানী কাঁচাবাজারে অভিযানে আমরা ক্রয় রশিদসহ অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি চারদিন আগে দোকানিরা যে ডিম ১৮০ টাকা ডজন বিক্রি করতেন, এখন তারা সেটা ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। তারমানে বাজার কিছুটা কমের দিকে বলাই যায়।’
সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পরও কমছে কেন? এমন প্রশ্ন ছিলো কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করেন তাহলে এভাবে বেঁধে দিয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে, সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। বেশি দামের পণ্য কেনা সাময়িক সময় বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করতে হবে।’
গোলাম রহমান জানান, শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা কারণে এখন আর তিনি ক্যাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এদিকে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও কেন বাজারে সেই দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতির কথা বলেন। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যা ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার অজুহাতও দিচ্ছেন এই ব্যবসায়ী।
তবে এমনটা মানতে নারাজ প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘দেশের খামারগুলোতে প্রতিদিন সাড়ে চার কোটি ডিম উৎপাদন হয়। এর বিপরীতে চাহিদা প্রায় চার কোটি। কিন্তু বন্যা ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ২০ থেকে ২৫ লাখ উৎপাদন কমতে হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। ডিমের মতো ব্রয়লার মুরগিও খামারির কাছ থেকে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত মধ্যস্থতাকারীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। এরা অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটা টাকা লুটে নেয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’