আন্তর্জাতিক

নিখোঁজ এমপি আনারের মরদেহ কলকাতায় উদ্ধার

ডেস্ক   আন্তর্জাতিক

২২ মে ২০২৪


| ছবি: সংগৃহীত

ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২২ মে) ভারতীয় উপদূতাবাস সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।

টানা নয়দিন নিখোঁজ থাকার পর বুধবার (২২ মে) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন রাজ্যের বিধাননগরের নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে নিউটাউনের টেকনোসিটি থানার পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, এমপির সম্পূর্ণ মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দেহের মূল অংশ ট্রলিতে ভরে পাচার করা হয়েছে, আর দেহাবশেষ উদ্ধার করা গেছে। এ ঘটনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, মোট ছয়জন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। এমপিকে হত্যার পর পাঁচজন দেশে ফিরে আসে এবং একজন এখনও ভারতেই অবস্থান করছে। তবে বাংলাদেশে ফিরে আসা পাঁচজনের মধ্যে একজন অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছে বলেও জানা গেছে। আর ভারতে অবস্থান করা ব্যক্তিকে আটক করতে চেষ্টা করছে ভারতের পুলিশ।

মূলত নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়ার পর এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারাই জানান মরদেহ আছে সঞ্জিভা গার্ডেনে। সে খবর দেয়া হয় কলকাতা পুলিশকে। পরে বুধবার এই মরদেহ উদ্ধার করে ভারতের পুলিশ।

জানা গেছে, যে ফ্ল্যাট থেকে আনোয়ারুল আজিম আনারের খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তার মালিকও একজন বাংলাদেশি। তিনি ভারতে গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছেন। কলকাতার পুলিশ তাকেও খুঁজছে বলে জানানো হয়েছে। 

চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে গত ১২ মে ভারতে যান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজিম। পরদিন ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। গত ১৬ মে সকাল ৭টা ৪৬ মিনিটে এমপি আজীমের ফোন থেকে পিএসের নম্বরে সর্বশেষ কল আসে। কলটি ধরতে পারেননি পিএস। এক মিনিট পর পিএস তাঁকে কল করলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়নি। এর পর থেকে এমপির সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি।

জানা যায়, এমপি আজীম একা দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের গেদে প্রবেশ করেন। এর পর কলকাতার ব্যারাকপুর সংলগ্ন মণ্ডলপাড়ায় পূর্বপরিচিত স্বর্ণ কারবারি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। আজীম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বরানগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন গোপাল। 

গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তার ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজিম কলকাতার মণ্ডলপাড়া লেনে তাঁর (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। পরদিন (১৩ মে) স্থানীয় সময় (কলকাতা) বেলা পৌনে দুইটার দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।’

জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়।

এরপর ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়, ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতদের ফোন করেন। কিন্তু তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।

গত মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের উপকমিশনার (বারাকপুর দক্ষিণ) অনুপম সিং সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুল আজিমের বিষয়ে এখনো কোনো কিছু তারা জানতে পারেননি। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের (আইবি) সূত্র বলেছে, গত চার–পাঁচ দিনে আনোয়ারুল আজিমের মুঠোফোন দুবার সচল হয়েছে। আসাম ও উত্তর প্রদেশে এগুলোর অবস্থান দেখা গেছে। এর মধ্যে আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস বাবার খোঁজে ভারতে গেছেন বলে পারিবারিক একটি সূত্রে জানা যায়। এমন অবস্থার মধ্যে আজ তার মরদেহ উদ্ধারের খবর আসে।

আনোয়ারুল আজিম ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম  প্রথমে আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার। 

এক সময় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন আজীম। হুন্ডি কারবার, চোরাচালান ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছিলেন আজীম। সীমান্তকেন্দ্রিক মাদক কারবারে জড়িত ছিলেন তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নানা অপরাধে এক সময় তাঁর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রভাব বলয় তৈরি করেন। ধীরে ধীরে মামলার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কালীগঞ্জে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। চোরাচালানের মধ্য দিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হন।

42