
পঞ্চগড়ে ৫ লাখ টাকা শতক মূল্যের কৃষি জমি মাত্র ৯ থেকে ১২ হাজার টাকায় (মূলদর) অধিগ্রহণ চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী জমি মালিকরা। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার খোলাপাড়া এলাকায় ওই জমিতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা জানান, আরাজি শিকারপুর মৌজার খোলাপাড়ার এলাকায় মহাসড়কের পাশের ১৫ বিঘা জমিতে তারা হাসপাতাল করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বছর দুয়েক আগে ওই জমিতে পঞ্চগড় পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট করতে জমি অধিগ্রহণের জন্য জমি মালিকদের নোটিশ করা হয়। এমনকি জমি মালিকদের না জানিয়ে ৫ লাখ টাকা শতকের জমি মাত্র ৯ থেকে ১২ হাজারে মূল্য নির্ধারণ করে অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
ফসলি জমিকে পতিত ও ছনবাড়ি দেখানো হয়েছে। ওই মৌজার একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার নিম্ন দরের জমির মূল্য গড় করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন জমি মালিকরা। ২০২২ সালে বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন জমি মালিকরা। কিন্তু তারপরেও গোপনে চলতে থাকে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। সম্প্রতি ওই জমিতে নোটিশবোর্ড স্থাপন করে পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের কাজ শুরুর তোড়জোর শুরু হয়। এতে জমি মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। ভুক্তভোগী জমি মালিকরা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল করা অন্যথায় জমির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করারও দাবি করার জোর দাবি জানান।
জমি মালিক নুরুল হক বলেন, এই জমিতে আমরা তেজপাতা, আঁখ ও সরিষাসহ বিভিন্ন শস্য আবাদ করি। চারপাশে সরকারি বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার ছেলে ডাক্তার। এই জমিতে আমরা হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে এটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট করতে অধিগ্রহণ করার জন্য আমাদের নোটিশ করে। আমরা আপত্তি জানালেও তারা গোপনে গোপনে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়। এমনকি আমাদের না জানিয়েই জমির মূল্য শতক জমি মূল দাম নির্ধারণ করে মাত্র ৯ থেকে ১২ হাজার টাকা। অথচ এই জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি শতক ৫ লাখ টাকার উপরে। তারা যে দর নির্ধারণ করেছে তা খুবই হাস্যকর। আমরা চাই এই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল করে অন্যত্র এই প্রতিষ্ঠান করা হোক।
আরেক জমি মালিক সাইদুজ্জামান পিনাক বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের কিছু দোসর কর্মকর্তা আমাদের ৭/৮ জন মানুষকে প্রতারিত করে অন্যায়ভাবে জমি অধিগ্রহণের জন্য গোপনে সব প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। তারা আমাদের ব জমির তিনগুণ মূল্য দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তাদের এই তিনগুণ মূল্য যে এমন হবে আমরা কল্পনা করতে পারি নি। আমরা বিষয়টিতে আপত্তি জানানোর পরও জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলছে। ন্যায্যমূল্য না পেলে আমরা এই জমি কোনভাবেই ছেড়ে দেবো না। তাই আমরা জমির মূল্যও নেই নি।
স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, এই জমিটি মহাসড়কের পাশের জমি। পৌরসভার শেষ হয়েছে এখানেই। বর্তমানে এখানে প্রতি শতক জমি বিক্রি হচ্ছে ৫ লাখ টাকার উপরে। কিন্তু এখানে যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে তা মানা যায় না। কয়েক বছর আগে কয়েক কিলোমিটার দূরে সারের বাফার গুদামের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেখানে প্রতি শতক জমি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানো উল্টো চিত্র।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের জন্য আইন মেনেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ১২ মাসে ৪০ টি জমি কেনাবেচার দলিল যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
Related