
দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতায় ঈদ যেন ফরিদা বেগমের কাছে একটি শব্দ মাত্র।সবাই যখন নতুন জামা কাপড় পরে কোরমা পোলাও খেয়ে ঈদ আনন্দে ব্যস্ত, ঠিক তখনো রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী গাউছিয়া বাজার (পূর্ব রমাকান্ত) এলাকার অসহায় ফরিদাকে জীবনের প্রতিটি দিন পার করতে হচ্ছে অনিশ্চয়তা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে । তার স্বামী মমিনুর ইসলাম দিনমজুর, যেদিন কাজ পান সেদিনই একটু ভালো খাওয়া- দাওয়া হয় , আর কাজ না থাকলে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে তাদের ।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মমিনুরের নেই নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা। সংসারে রয়েছে দুই শিশু সন্তান—আট বছরের মোবাশ্বের ও ১৩ মাস বয়সি রহমতউল্লাহ। ঈদ মানেই শিশু কিশোরদের কাছে নতুন পোশাক, একটু ভালো খাওয়া দাওয়ার আর আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠার কথা , সেখানে অসহায় মা-বাবার পক্ষে মোবাশ্বের ও রহমতউল্লাহর সেই রঙিন স্বপ্ন যেন শৈশবেই দূ:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে ফরিদার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাত্র ১০ হাতের একটি জরাজীর্ণ চালাঘরই তাদের একমাত্র সম্বল। বৃষ্টি হলে চালার ভেতর পানি পড়ে, রান্নার নির্দিষ্ট জায়গা নেই, আসবাবপত্র বলতে ছোট একটি ভাঙা চৌকি, ছেঁড়া কাঁথা-বালিশ। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নেই ফরিদার সংসারে । প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক মাস আগে দোকান থেকে বাকিতে মাংস কিনেছিলেন মমিনুর, কিন্তু আজও সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। সংসারের এই অভাব অনটনের কারণে বাজারে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন মমিনুর।
ফরিদা ও মমিনুর দম্পতির এই দুঃখ-দুর্দশার খবর পেয়ে ফরিদার পরিবারে ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাব। অসহায় পরিবারের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে শাড়ি, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক, সেমাই- চিনি নিয়ে তাদের নিকট উপস্থিত হয় গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের আহবায়ক আব্দুল আলীম প্রামাণিক, সদস্য সচিব কমল কান্ত রায়সহ কয়েকজন সদস্য। স্থানীয় সাংবাদিকদের এই মানবিক উদ্যোগে ফরিদার পরিবারে এসেছে ঈদের ছোঁয়া ।
উপহার হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত ফরিদা বেগম কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সেমাই-চিনি আল্লাহ মিলাইলে খাই, না হলে মুখোত চড়ে না। হামার আবার ঈদ আছে বাহে! খাবারই জোটে না। আজ তোমার দেওয়া সেমাই-চিনি আর ছওয়ার জন্য নতুন কাপড় পাইনো ,তাতে মনটা ভরি গেল ।’
সাংবাদিকদের এই উদ্যোগ সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সামর্থ্যবানদেরও এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
Related