শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ যুব দলের সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যেখানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন ওপেনার জাওয়াদ আবরার। হয়েছেন সিরিজসেরা, করেছেন সিরিজের সর্বোচ্চ ৩০২ রান। ব্যক্তিগত এই অর্জনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সিরিজ জয় জাওয়াদের আনন্দটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও জোড়া সেঞ্চুরি করেও পুরোপুরি তৃপ্ত নন বাংলাদেশের এই ডানহাতি ওপেনার। গতকাল সিরিজ জয়ের পর জাওয়াদ শ্রীলঙ্কা থেকে সকালের বাণীকে নিজের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন। (উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সিরিজজয়ী বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কা সফর শেষে দেশে ফিরেছে)
জোড়া সেঞ্চুরি, সিরিজসেরার পুরস্কার ও বাংলাদেশের সিরিজ জয়। সবমিলিয়ে কেমন লাগছে?
জাওয়াদ : আলহামদুলিল্লাহ, দেশের জন্য রান করতে পারা অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা আমরা সিরিজটা জিততে পেরেছি, এজন্য বেশি ভালো লাগছে। আমার একটা অবদান ছিল দলের জন্য, আর এই রান দলকে সাহায্য করতে পেরেছে, এটাই ভালো অনুভূতির।
তিনশ’র অধিক রান করলেন, সিরিজ শুরুর আগে এমন কোনো ধারণা বা পরিকল্পনা ছিল?
জাওয়াদ : না, তবে লক্ষ্য ছিল একটা-দুইটা সেঞ্চুরি করতে পারব। যদিও শেষ ম্যাচে রান করতে না পারার আফসোস রয়েছে। যে কোনো ম্যাচে রান করতে না পারলে খারাপ লাগে। তবে তামিম বা রিজানরা ভালো খেলেছে। তাদের জন্যও ভালো লাগছে।
‘অনেকদিন ধরে আমরা একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। নিজেদের ভেতর যে বোঝাপড়া তা খুবই দারুণ। সে কারণে আপনি দেখবেন যে আমরা সবাই পরপর তিনবার করে হাত মিলিয়ে থাকি। এটা এক-দুই বছরের বিষয় না, আমরা অনূর্ধ্ব-১৫ থেকেই সবাই সবার ব্যাপারে খুব ভালো করেই জানি।’
দেশের বাইরে দ্রুততম (৮ ইনিংসে) দুই সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির হিসাব কতটা মিলেছে?
জাওয়াদ : অবশ্যই দেশের বাইরে এরকম দুইটা সেঞ্চুরি করা একটা বড় প্রাপ্তি। যার অনুভূতি ভাষায় বোঝানোর মতো নয়। কেবল আমার কথাই বলব না, দলের আরও যারা আছে তাদের মধ্য থেকে ফাহাদ, রিজান বা তামিম সবাই কিন্তু ভালো করেছে। এটাই টিম গেম।
কোন কোচের পরামর্শ বেশি কাজে লেগেছে ব্যাটিংয়ে?
জাওয়াদ : আমাদের প্রধান কোচের (সারোয়ার ইমরান) সঙ্গে কাজ করেছি। এ ছাড়া সেলিম স্যারের সঙ্গেও কাজ করা হয়েছে। তারা বলে দিয়েছেন কখন কী করতে হবে, কোন পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হয়। এগুলো নিয়ে তাদের অনেক সহায়তা পেয়েছি। বাংলাদেশ যুব দলের অনুশীলন ছাড়াও বড় বড় কোচদের সঙ্গে কাজ করেছি বিপিএল ও ডিপিএলে। যা আমার ব্যাটিংয়ে অনেক ভূমিকা রেখেছে।
টুর্নামেন্টে যেভাবে দাপট দেখিয়ে ব্যাট করেছেন, এতেই তৃপ্ত নাকি এখনও (রানের) ক্ষুধা আছে…
জাওয়াদ : সত্যি কথা বলতে ক্ষুধা এখনও রয়ে গেছে। কারণ দুইটা ম্যাচে বড় রান করতে পারিনি। তবে ওই দুইটা ম্যাচেও যদি ভালো রান করতে পারতাম, নিজের কাছেও ভালো লাগত। সিরিজটা পরিপূর্ণ হত, নিজেও তৃপ্তি পেতাম।
আপনার ব্যাটিং এপ্রোচ দেখে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কানরা কোনো প্রতিক্রিয়া দিয়েছে?
জাওয়াদ : ওখানে বাইরের মানুষের সঙ্গে আমাদের তেমন কথা হয়নি। তবে শ্রীলঙ্কান প্লেয়ারদের কেউ কেউ বেশ উৎসাহ দিয়েছে। প্রশংসা করেছে আমাদের। সবকিছু মিলিয়ে মাঠে যাই ঘটুক না কেন বাইরে তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
চার–ছক্কা মারলে অপর প্রান্তের ব্যাটারের সঙ্গে তিনবার করে হাত মিলিয়েছেন, এর নেপথ্যে বিশেষ কিছু আছে?
জাওয়াদ : এটা একটা অভ্যাস বলতে পারেন, অনেকদিন ধরে আমরা একসঙ্গে ক্রিকেট খেলছি। নিজেদের ভেতর যে বোঝাপড়া তা খুবই দারুণ। সে কারণে আপনি দেখবেন যে আমরা সবাই পরপর তিনবার করে হাত মিলিয়ে থাকি। এটা এক-দুই বছরের বিষয় না, আমরা অনূর্ধ্ব-১৫ থেকেই সবাই সবার ব্যাপারে খুব ভালো করেই জানি।
বয়সভিত্তিক দলে থাকতেই ডিপিএলে এবার সব ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন, এটা কেমন কাজে দিচ্ছে?
জাওয়াদ : অবশ্যই কাজে লেগেছে বলতে পারেন। ডিপিএলে দেশের সেরা ক্রিকেটাররা খেলেন। তাদের সঙ্গে খেলে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। যা আমিসহ এখানে দলে থাকা সবার কাজটা সহজ করে দিয়েছে।
ডিপিএলে লিটন দাস আপনার ওপেনিং পার্টনার ছিল, এ ছাড়াও জাতীয় দলের অনেক তারকাকে পেয়েছেন, কী কথা হত আপনাদের…
জাওয়াদ : আলহামদুলিল্লাহ সবাই খুব প্রশংসা করেছিল। লিটন ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাট করতে পারা স্বপ্নের মতো। বলতে পারেন ‘ড্রিমস কাম ট্রু’। জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে ওপেনিং করছি, এটা অনেক বড় কিছু। উনি আমাকে বলেছিলেন ‘‘ন্যাচারাল ও ভালো হচ্ছে, এটা চালিয়ে যাও’’। এখন যত ভালো করা যায়, তত সুযোগ আসবে।
সর্বশেষ বিপিএলেও আপনার অভিষেক হলো, কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
জাওয়াদ : এটা অনেক বড় একটা টুর্নামেন্ট, যেখানে বাইরের অনেক ক্রিকেটারও ছিল। তাদের সঙ্গে প্রথমবার ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছি, একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট কীভাবে চলে সবকিছুই কাছ থেকে দেখা। অনেক মজা হতো দলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে, পুরো পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছি। সবমিলিয়ে বলব যে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এর আগে আপনারা এশিয়া কাপ জিতেছেন, বিশ্বকাপ জয়েরও নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে!
জাওয়াদ : এখন থেকেই প্রস্তুতি চলছে। বিশ্বকাপের আগে আমাদের আরও কয়েকটা সিরিজ থাকবে। সেখানে খেলে আরও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করব, এখনও কয়েক মাস বাকি। বিশ্বকাপের জন্য আরও কীভাবে নিজেদের উন্নতি করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করব। আর খেলায় তো হার-জিত থাকে, ভাগ্যেরও একটা ব্যাপার রয়েছে। আল্লাহ ভরসা ভালো কিছুই হবে।
বন্ধু তামিমের চেয়েও আপনার ভক্তসংখ্যা বাড়ছে, তারকাখ্যাতি পেতে শুরু করেছেন ইতোমধ্যে…
জাওয়াদ : এগুলো নিয়ে আসলে খুব একটা ভাবি না। (আজিজুল হাকিম) তামিম আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমি রান করলে তামিম খুশি হয়, তামিম রান করলে আমি খুশি হই। আমাদের মধ্যে সুন্দর একটা বন্ডিং রয়েছে।