


দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর হিমাগারে (ফুলবাড়ী ক্লোল্ড স্টোরেজ) ১লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকার হিমাগার গেটে আলুর দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও কৃষকরা পাচ্ছেন প্রকার ভেদে ১৫ থেকে ১৬ টাকা । উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত আলু চাষ মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করা হয়েছিল। এতে উৎপাদন হয়েছিল ৪৫ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন। দিনাজপুরের দক্ষিণ পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট এই পাঁচ উপজেলার একমাত্র কোল্ড স্টোরেজ হচ্ছে ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজ। এর ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৮০ হাজার বস্তা (৫৫ কেজি জনের বস্তা)।
জানা যায়, ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে ১ লাখ ৪০হাজার বস্তা আলু অবিক্রীত অবস্থায় কোল্ড স্টোরেজে পড়ে আছে। এবারে আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকে কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি। এখন নতুন আলুর রোপণের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। কোল্ড স্টোরেজে থাকা বিপুল পরিমাণ আলু এখনই বিক্রি করতে না পারলে তা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়বে, পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কৃষি ও কৃষকের বাঁচাতে সরকার গত ২৭ আগস্ট হিমাগার গেটে আলুর দাম ২২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু কেনার ঘোষণা দেন। অথচ বাজারে প্রকার ভেদে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তবে কৃষকরা পাইকারি হিসেবে কোল্ড স্টোরেজ থেকে প্রকার ভেদে ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
স্থানীয় আলু চাষীরা বলেন, আলুর বীজ, সার, কীটনাশক জমির ভাড়া সহ‘ ৫৫ কেজির এক বস্তা আলু উৎপাদন খরচ ও ভাড়া মিলে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। এতে এক কেজি আলু দাম হয় ২৪ টাকা। অথচ সরকার প্রতি কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও আমরা কোল্ড স্টোরেজে পাইকারি দরে ১৫ থেকে ১৬ টাকায় বিক্রি করছি। ফলে প্রতি কেজি আলুতে ৮ থেকে ৯ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আলু চাষি মিজানুর রহমান বলেন, বীজ আর বাড়ির খাওয়ার জন্য ৯ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরে সংলক্ষণ করেন। লোকসানের ভয়ে আলু বের করছেন না, তবে গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ৪ বস্তা আলু বের করেছেন। অবশিষ্ট ৫ বস্তা বের করবেন নাকি এখানেই ছেড়ে দেবেন এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এ কৃষক।
আলু চাষি আশিকুর রহমান বলেন, আবাদের জন্য বীজের জন্য এবং বাড়ির খাওয়ার জন্য ৮ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করেন। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আলু বের করতে চাচ্ছেন না। তবুও আবাদের এবং বাড়ির জন্য জন্য গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ২ বস্তা আলু বের করেছেন। অবশিষ্ট ৬ বস্তা আলু আদৌ বের করবেন নাকি সেটি তিনিও বলতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আলু ব্যবসায়ী বলেন, ‘আলুর দাম বাড়লে সরকারি সংস্থাগুলো দাম নিয়ন্ত্রণ করতে নামে। কিন্তু দাম পড়ে গেলে ব্যবসায়ীদের কোনো খোঁজ খবর রাখে না। খুচরা বা পাইকারি ১৫ টাকা কেজিতেও কেউ আলু কিনছেন না। ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের প্রধান হিসাব ব্যবস্থাপক আবুল হাসনাত বলেন, এই হিমাগারে ৫৫ কেজি ওজনের বস্তায় ১লাখ ৮০ হাজার বস্তা আলু সংলক্ষণ করা হয়েছে।
যার ওজন ১০ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। এরমধ্যে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজ থেকে সংরক্ষিত আলু বের হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার বস্তা। বের হওয়ার অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে ১লাখ ৪০ হাজার বস্তা আলু। গত বছরে এ সময়ে মধ্যে ৫০ হাজারেও বেশি বস্তা আলু বের হয়েছিল। বাজারে আলুর চাহিদা কম থাকায় কোল্ড স্টোরেজ থেকে কৃষকরা আলু তুলতে আসছেন না। তবে কৃষকদের সঙ্গে কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংরক্ষিত আলু কৃষকদের বের করে নিতে হবে। কারণ ১৫ নভেম্বরের পর কোল্ড স্টোরেজের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে পরে থাকা আলুর কোন ক্ষয় ক্ষতি হলে তার দায় দায়িত্ব কৃষকের। তবে আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব আলু বের হয়ে যাবে।