


ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাজশাহীর সরকারি কলেজ, মাদ্রাসা ও বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের আওতাভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসসমূহ দিনব্যাপী কর্মবিরতি, কালো ব্যাজ ধারণ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী কলেজসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সকল পরীক্ষা, প্র্যাকটিক্যাল, ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষক কর্মকর্তারা বলেন, “শিক্ষক সমাজের প্রতি এমন ন্যক্কারজনক হামলা দেশের জন্য ভয়াবহ সংকেত। যেখানে শিক্ষকদের হেনস্তা করা হয়, সেখানে জাতির উন্নয়ন অসম্ভব।” তারা আরও অভিযোগ করেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করার পেছনে একটি মহল সক্রিয়, যা বন্ধে প্রয়োজন সুষ্ঠু তদন্ত ও কঠোর বিচার। বিসিএস জেনারেল ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ড. শাহ মো. মাহবুব আলম বলেন, “বর্তমানে দেশে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত, অপমানিত ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, অথচ এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না।
আমরা এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার প্রত্যাশা করি।” রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. যহুর আলী বলেন, “সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসির মাধ্যমে ঢাকার সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও গৌরবান্বিত কলেজগুলোর স্বকীয়তা বিনষ্ট করবে এবং শিক্ষার পরিধি সংকুচিত করবে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ৫৫০টি আসন ফাঁকা রয়েছে, সেখানে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রয়োজন কতটা যৌক্তিক?” তিনি আরও বলেন, “বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করলে শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, বরং জটিলতা আরও বাড়বে। নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করে তার অধীনে ঢাকার সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা হলে বাস্তবসম্মত সমাধান পাওয়া যাবে।”
অন্যদিকে, কিছু শিক্ষার্থী মনে করছেন, “শিক্ষকরা কেবল ৭ কলেজের ১২০০ ক্যাডার পদ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছেন” -এই ধারণা সঠিক নয়। তাদের মতে, পদ হারানোর আশঙ্কা থাকলেও তার চেয়ে বড় ক্ষতি হবে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা। যদি এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তবে ভবিষ্যতে শতবর্ষী কলেজগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি উঠবে, ফলে দেশের কলেজ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়বে।
রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম আলী, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সেরাজ উদ্দীনসহ কলেজের অন্যান্য শিক্ষক কর্মকর্তা অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও মর্যাদা রক্ষায় শিক্ষকদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে- অন্যথায় আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”