1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
শিক্ষকতা পেশার বর্তমান প্রেক্ষাপট, পেশায় অনীহা, সমাধান কোন পথে? | দৈনিক সকালের বাণী
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন

শিক্ষকতা পেশার বর্তমান প্রেক্ষাপট, পেশায় অনীহা, সমাধান কোন পথে?

সকালের বাণী ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১১২ জন দেখেছেন

“বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে মোটাদাগে সকলে চেনার, জানার ও কিছুটা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে।”

 

 

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই দুই শিক্ষক হওয়ার পিছনে সত্যিকারের নায়ক,গল্পকার,স্বপ্নকার সেই সব শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের কথা কেউ মনে রাখে না। জীবনের শেষ মুহূর্তে তাঁদের নেই যেমন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তেমনি প্রাত্যহিক জীবনের বাঁকে বাঁকে পেতে হয় ” শিক্ষকতা” নামক শব্দটির সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিগত প্রবঞ্চনা আর সঙ্গী হয় অব্যক্ত মানসিক যন্ত্রণা।

 

 

`বিগত বছর গুলোতে শিক্ষা,শিক্ষক ও শিক্ষকতা জীবন, এই তিনের সমন্বয় করলে একদিকে যেমন শিক্ষকদের কর্ম জীবনের নানা লাঞ্চনা ও বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে, তেমনি শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনীহার চিত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে ভাবেও ফুটে উঠেছে ।’

 

 

সবচেয়ে ভয়ানক হলো বর্তমান অবস্থা! গত দুই মাসে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মহোদয়গণকে জাতির সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে “শিক্ষকতা” শব্দটিকে একপাক্ষিক ভাবে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, বাবার বিচারের দায়িত্ব এখন সন্তানদের কাঁধে!

শিক্ষকতা পেশার প্রতি অনীহার চিত্র গুলো বিশ্লেষণ করলে সমাজ কাঠামোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ গুলোর ভিন্ন ভিন্ন নেতিবাচক চিত্র ফুটে উঠে।

তবে এগুলোর মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এতটাই প্রকট হয়েছে যেখানে “শিক্ষকতা” শুধুই ঢ়ড়পশবঃ ঢ়বহ -এ পরিণত হয়েছে।

 

 

আজ থেকে ১৫ বছর আগের সামাজিক মূল্যবোধ গুলো বিশ্লেষণ করলে “শিক্ষকতা” পেশার সেই সব সোনালি দিনগুলো এখন আদর্শিকভাবে কল্পনাতীত মনে হয়। কিছু দৃশ্য এখনো চোখে যেন কালো মেঘ ঘিরে টল করে জল আসার সমতুল্য।

এই তো সেই দিন, ছাত্র সাইকেলে যাচ্ছে, স্যারকে দেখে তড়িৎ নেমে ভদ্রভাবে সালাম ও কুশল বিনয় করে চলে যেত। শিক্ষকদের বেত্রাঘাতে বেত ভেঙে যেত,তারপরেও নীরবে ছাত্ররা স্যারের প্রতি মাথা নত ও নিজের ভুল স্বীকার করতো।সেই সব ছাএ-ছাএীদের না ছিল নিজের কোন ক্ষোভ ও অভিমান, না ছিল তাদের পরিবারের কোন রাগ বা ক্ষোভ ।

অপরদিকে রাতের আধাঁরে ঐ সব আদর্শ শিক্ষকদের ছাত্র বা ছাত্রীদের রাতের পড়াশোনার গুন গুন শব্দ শ্রবণে পাড়ায় পাড়ায় গমন, তাদের দেওয়া প্রেষণা ও প্রেরণা সত্যি যেন আদর্শের উপরে আদর্শ, সত্যের উপরেও সত্যকে হার মানায়। সত্যিকার অর্থে ছাত্র ও শিক্ষক সমপর্কে উভয়ের উভয়ের প্রতি আগ্রহ থাকবে, তেমনি একদিকে স্নেহ ও অন্যদিকে সম্মান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

একটি কথা না বললে নয়,আইন দিয়ে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হলেও স্বামী ও স্ত্রী , বাবা ও মা, বাবা -মা ও ছেলা মেয়ে , ছাত্র শিক্ষক সহ এরকম অনেক সামাজিক রক্তীয় বা জ্ঞাতি সম্পর্কের দৃঢ়তার বন্ধন গুলো রক্ষায় আইন বরং কেমন যেন উল্টো মারমুখী অবস্থান নেয়,যার ফলাফল শূন্য।

 

ভিন্ন ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও এইটি সত্য, গত ১০ বছরে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মাত্র ৫% বা তার চেয়ে কম এর প্রথম পছন্দ শিক্ষক আর ৯৫% এর ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র,প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য।

যেখানে তাদের পছন্দই নয় “শিক্ষকতা” সেখানে শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় তারা মনস্তঃতাত্ত্বিকভাবে কতটুকু নিবেদিত তা বিবেচ্য বিষয় তেমনি তাদের প্রথম পছন্দ কেন শিক্ষকতা নয়,তা ভাবারও সময় এসেছে। আর যারা পছন্দ করে এই মহান পেশায় এসেছে ,তারাও কতটুকু মানসিক ও শারীরিকভাবে অবিযোজিত?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে, ধীরে ধীরে স্রোতের অনুকূলে গা ভেসে দেওয়ার প্রবণতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
একই ভাবে প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, নিরুপায় হয়ে তারা এই মহান পেশায় এসেছে।

 

 

ইদানিং বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্যই শুভ লক্ষণ তবে তাদের অভিযোজন নিয়ে যেমন আশংকা তেমনি দ্রুত অন্য পেশায় চলে যাওয়া মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহকে নিরুৎসাহিত করে।

উপরের চিত্র গুলো বর্তমান আমাদের শিক্ষা ব্যব¯হায় শিক্ষকতা পেশায় যেমন বেকার শিক্ষিত শ্রেণির অনাগ্রহ বা অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ,তেমনি শিক্ষকতা পেশাটির মূল্যবোধের সাথে আমাদের সমাজ কাঠামোর সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ তথা রাষ্টীয় মূল্যবোধের সাথে কতটুকু সুসমন্নয় হয়েছে তা ভাবার সময় এসেছে।

শিক্ষকতা যেমন মহান পেশা তেমনি জাতি গঠনের সবচেয়ে বড় ও উত্তম প্লাটফর্ম যেখানে নিজেকে যেমন সার্বক্ষণিক বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় তেমনি অগণিত চোখে আদর্শ স্বপ্নের বীজ বপন করা ও বাস্তবায়ন করা যায়।

শিক্ষকতা, শিক্ষা ও উন্নত জাতি ও রাষ্ট্র অঙ্গগাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এই পেশায় এত অনীহার মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণটি যেমন খুবই জরুরি তেমন প্রাইমারি থেকে উচ্চতর পর্যন্ত শিক্ষা কাঠামোর মৌলিক সৃজনশীলতা ও আদর্শিক মানদণ্ড তথা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে।

 

 

তবে বেশ কিছু আদর্শ শিক্ষক মনে করেন পরিবর্তনটি একেবারে শিক্ষার মৌলিক তথা প্রথম ধাপ প্রাইমারি থেকে শুরু করা জরুরি।

এক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ধারাবাহিকতা অনীহা অনেকটাই হ্রাস করতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার সমাজ বিশ্লেষন করতে সবধহং ও মড়ধষ এর সমন্বয় দেখিয়েছেন। সবধহং বা মাধ্যমে বা প্রক্রিয়া যদি অসৎ হয়, লক্ষ্য অসৎ হবে।

যেমন নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি মানসম্মত ও স্বচ্ছ না হয়, নিয়োগপ্রাপ্তরা যেমন অদক্ষ ও অসৎ হবে তেমনি তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সবসময়ই রৎৎধঃরড়হধষ হবে।

 

 

যে কোন শিক্ষা ব্যব¯হাপনায় যখন রৎৎধঃরড়হধষ বহারৎড়হসবহঃ ফবাবষড়ঢ় করে,সেই শিক্ষা ব্যব¯হায় রহহড়াধঃরড়হ বা মেধা দেশ ও জাতির জন্য বিলিয়ে না দিয়ে বরং মেধাবীরা বাস্তবতার নিরিখে নিজেকে কুয়োরব্যাঙে গুটিয়ে রেখে মেধা ও মননকে বুড়িগঙ্গায় ঢেলে দিয়ে জৈবিক ও অর্থনৈতিক চাহিদাকে মুখ্য মনে করে জীবনের মূল্যবান সময় গুলো শুধুই অপচয় করার চেষ্টা করে।

আবার অনেক গুণীজন মনে করেন,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুক্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সমপূর্ন আলাদাকরন ও স্বতন্ত্র্য বেতন কাঠামোসহ গবেষনামুখী প্রতিষ্ঠানকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।তবে প্রত্যকটি কর্ম সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি তৈরিতে প্রতিদিনই াধষঁব ধফফ করে।

 

শিক্ষকতা নামক মহান পেশাটি এই ক্ষেত্রে কতটুকু পেরেছে তা নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। তাই শিক্ষকতা পেশাটির সামাজিক মূল্যবোধের সাথে অর্থনৈতিক সংযোগ অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা হল,আমাদের সমাজে কর্মের মূল্যায়নের চেয়ে অর্থ,যশ,ও ক্ষমতা অপব্যবহার ও আধিপত্যের মূল্যায়ন সবচেয়ে বেশি। তাই অনেকেই এখন শিক্ষকতা নামক মহান পেশাটিকে নিছক একটি সংস্কৃতির অংশ মনে করেন।

একটি কথা মনে রাখা উচিত, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা এই পাঁচটি খাতের উপর একটি দেশের মানবিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোত উন্নয়ন নির্ভর করে। এই খাত গুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ার মানদণ্ড, পদোন্নতি তথা স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও গবেষণাকে সম্পূর্ণ আলাদা ও মডেল করা উচিত। নইলে ফলাফল শূন্য।

 

এনামুল হক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, পীরগাছা, রংপুর।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )