
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। তবে অভিযোগ উঠেছে, বেশি টাকা দিলেই মিলছে সার, আর কম দামে চাইলে নেই বলেই জানিয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে ফসল আবাদে খরচ বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।
ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়া গেছে। উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসির অধীনে মোট ১৮ জন সার ডিলার রয়েছেন। তাদের দাবি, চলতি মাসে চাহিদার অর্ধেকও সার সরবরাহ হয়নি। দুই হাজার ৫৫০ টন চাহিদার বিপরীতে ইউরিয়া পাওয়া গেছে মাত্র ৩২০ টন। একইভাবে টিএসপি ৮০০ টনের বিপরীতে ৩২০ টন, ডিএপি এক হাজার ১০০ টনের বিপরীতে ৫৫০ টন এবং পটাশ এক হাজার ৭০০ টনের বিপরীতে মাত্র ২০০ টন বরাদ্দ এসেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ টাকায়। একইভাবে এক হাজার ৫০ টাকার ডিএপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়, এক হাজার ৩৫০ টাকার ইউরিয়া এক হাজার ৪২০ টাকায় এবং এক হাজার টাকার এমওপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ টাকায়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দাম দিয়েও সার মিলছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
পৌরসভার বেংকান্দা এলাকার কৃষক রাহেবুল ইসলাম উল্লাস বলেন, “সারের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরেছি; পাইনি। পরে পাটগ্রাম বাজারের বিএডিসি ডিলার ফজলুর হকের দোকান থেকে এক হাজার ৫০ টাকার ডিএপি কিনেছি এক হাজার ৩৮০ টাকায়। কোনো রশিদও দেয়নি।”
কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক হাসানুরজ্জামান হাসান বলেন, “সার ও কীটনাশকের দাম দিন দিন বাড়ছে। দিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। গত বছর আলু আবাদে ক্ষতি হয়েছে, এবারও একই অবস্থা হতে পারে।”
জগতবেড় ইউনিয়নের কৃষক একরামুল হক জানান, “বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সার পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম বেশি। সামনে ভুট্টার মৌসুমে যদি এই সংকট থাকে, তাহলে বড় সমস্যা হবে।”
বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “চার বিঘা জমিতে কপি লাগিয়েছি। বাজার ঘুরে সার পাইনি। পরে বাউরা বাজারের এক দোকান থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় ৫০ কেজি টিএসপি কিনেছি। বেশি টাকা না দিলে সার মেলে না।”
বাউরা বাজারের বিএডিসি ডিলার মাহবুবার রহমান বলেন, “এ মাসের বরাদ্দ এখনও আসেনি। সার নেই। আগামীকাল দোকানে আসেন, কথা হবে।” আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সরকার বলেন, “আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছি না। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম, তাই সংকট তৈরি হয়েছে। বরাদ্দ এলেই সমস্যা কেটে যাবে।”
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, “বরাদ্দের অংশ মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে।”
পাটগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামিয়ার রহমান জানান, “সারের অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি জেলা সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি রবি মৌসুমে সারের সংকট থাকবে না। বাজার মনিটরিং কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।”
Related