


দিনাজপুরের খানসামা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) এক প্রশিক্ষণার্থীর ওপর ধর্মীয় বৈষম্য, শারীরিক–মানসিক নির্যাতন এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একাধিক পর্যায়ে অপমান, গালিগালাজ, বাহিনীর মতো আচরণ এবং পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রশিক্ষণার্থী মো. রুহুল আমিন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করে স্বচ্ছ তদন্ত ও পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন।
রুহুল আমিন জানান, “মোটর ড্রাইভিং উইথ অটোমেকানিক্স (অক্টোবর–ডিসেম্বর/২০২৫)” সেশনে বিকেলের ব্যাচে রোল নং ০১ হিসেবে ভর্তি হন তিনি। ডরমিটরির কক্ষ ৩০৪–এর সিট ০৪ ছিল তার নির্ধারিত থাকার জায়গা। অভিযোগ অনুযায়ী, ২৭ অক্টোবর রাতে সিকিউরিটি গার্ডদের অনুমতি নিয়ে তিনি নিকটবর্তী ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেন এবং রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে ডরমিটরিতে ফিরে আসেন। পরদিন সকালেই কেয়ারটেকার মানিক চন্দ্র রায় তাকে ইন্সট্রাক্টর গোলাম মোস্তফার কক্ষে নিয়ে গেলে জানানো হয়—তার ডরমিটরি সিট বাতিল করা হয়েছে। তিন দিন পর ৩০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক নোটিশও দেওয়া হয়।
রুহুল আমিন দাবি করেন, এরপর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। ২ নভেম্বর তাকে অধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে নেন কেয়ারটেকার মানিক চন্দ্র রায়, ইন্সট্রাক্টর গোলাম মোস্তফা এবং অফিস সহায়ক রমজান আলী। সেখানে তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি, ভয়ভীতি প্রদর্শন—এসবের মুখোমুখি হতে হয়। এমনকি কক্ষ থেকে বের করার পর তাকে রুমে তালাবদ্ধও করা হয় বলে দাবি তার। ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণযোগ্য বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের জানালেও অধ্যক্ষ শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। সাময়িকভাবে সিট ফিরিয়ে দেওয়া হলেও অভিযোগের বিচার বা তদন্ত করা হয়নি। বরং ৯ নভেম্বর কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তার ছাত্রত্ব ও ডরমিটরি সিট চূড়ান্তভাবে বাতিল করা হয়। পরদিন কর্মচারীদের উপস্থিতিতে তাকে জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এমনকি ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রুহুল আমিন ইতোমধ্যেই ৩ নভেম্বর খানসামা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (জিডি নং–১০৩)।
জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া আবেদনে রুহুল আমিন উল্লেখ করেন—ঘটনাটি সংবিধানের ২৬, ২৮ ও ৪১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন; পাশাপাশি বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩২৩, ৩৫২, ৫০৬ এবং সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত ১৬৬ ও ২১৭ ধারার স্পষ্ট বিরোধিতা। তার দাবি—একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অনুশীলনকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষার্থীকে এমন আচরণের শিকার হতে হওয়া উদ্বেগজনক এবং সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং তার ছাত্রত্ব ও ডরমিটরি সিট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে খানসামা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাই কুমার দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিটিসির নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্ধারিত আইন মেনে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার্থে তাকে নিয়ম অনুযায়ী অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।