নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আপনা- আপনি অনেক বাদুড়ের অভয়াশ্রম গড়ে উঠতে দেখে মুখরিত পুরো এলাকাবাসী। এক সময় গ্রাম-গঞ্জে, বনে জঙ্গলে উঁচু গাছের মগডালে বাদুড়ের মাথা নিচু করে ঝুলে থাকার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ত। তখন বাদুড়ের উড়াউড়ি আর কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হতো চারপাশ। তবে বর্তমানে বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থল, খাবারের সংকট, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ এর লাইন; জনসংখ্যা বৃদ্ধি নানাবিধ কারণে বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ী নিশাচর প্রাণী বাদুড়।
নানা হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও প্রায় শতবর্ষ ধরে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের নগরবন গ্রামের প্রায় ২ বিঘা জমির ওপরে বটগাছ বিস্তৃত এলাকায় বাদুড়ের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। এই বিশাল আকৃতির বটগাছ, শিমুল ও বাঁশবাগানজুড়ে দেখা মিলবে শত শত বাদুড়ের। এ যেন বাদুড়ের রাজ্য। এই রাজ্যে অপরিচিত কোন লোক প্রবেশ করলেই চেচামেচি বেড়ে যায় এই অবস্থার সৃষ্টি হলে আশপাশের ছোট বড় যে কোন বয়সের লোকের দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষনিক বাদুড়ের রাজ্যে ছুটে এসে দায়িত্বের সহিত দেখতে বলেন বাদুড়ের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশ প্রদান করেন শুনে মনে হয় যেন ঐ এলাকার মানুষের সাথে বাদুড়ের আত্মার অস্তিত্ব জড়িত। প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে তাদের হুকের মতো পা দু’টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। মাথায় সামান্য হলুদ রঙ থাকলেও পুরো দেহটি কালো। একটু শব্দ হলেই দল বেঁধে পালকহীন চামড়া মোড়ানো ডানায় কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে আবার নীরব। দেখলেই মনে হয় রাতের অক্লান্ত পরিশ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুমই খুঁজছে।
গোধূলির রং মাখতেই যেন অন্যান্য পাখি আর বাদুড়ের ছোটাছুটিতে এলাকাটিতে সৃষ্টি হয় সৌন্দর্যের অবর্ণনীয় এক মুখরিত পরিবেশ। সকালে এর আশপাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালে এদিক-সেদিক দেখা যায় উড়ন্ত বাদুড়ের দল।ওই গ্রামের ঝড়িয়া চন্দ্র বলেন, প্রায় ১ শত বছর ধরে এরা স্থায়ীভাবে এখানেই আছে। খাদ্যের সন্ধানে গোধুলির রঙ মাখতেই উড়ে চলা এবং ভোরে নীড়ে ফিরে আসা বাদুড়গুলো দেখে মনে হয় আকাশ যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কুমকুম আক্তার সাথি বলেন, বাদুড় নিরীহ প্রাণী। গরমে ডানা ছেড়ে হাত পাখার মত বাতাস করে। আবার নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এরা যেন পোষা প্রাণীদের মতোই নির্ভয়ে বসবাস করছে বহুকাল ধরে।
পাখি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষন নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বাদুড় নিয়ে গল্প-কাহিনী আর কুসংস্কারের যুগ কেটে গেছে। এরা কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। পরাগায়নে সাহায্য করে। তাই উপকারী ও পরিবেশবান্ধব এ স্তন্যপায়ী প্রাণীটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
বাদুড়ে বেষ্টীত মুখরিত ঐ পল্লী অঞ্চলের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জাদু মিয়া বলেন, অবলা পাখি পাকা রাস্তা সংলগ্ন ত্রিপুতিতে যেন তারা তাদের শান্তির নীড় খুঁজে অভয়াশ্রমে পরিনত করেছেন। আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করি যেন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অবলা পাখি যেন অবহেলিত না হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি হক বলেন, আমি শুনেছি উপজেলা চত্বরের দক্ষনে দেড় কিঃমিঃ দুরে পল্লী অঞ্চলে বাদুড়ের অভয়াশ্রম গড়ে উঠেছে এরা পরিবেশ বান্ধব পাখি এদের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে আমাকে অবগত করলে আমি তাদের নিরাপত্তা জোরদারের স্বার্থে ব্যাবস্থা নিব।