আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিমা তৈরি ও রং তুলিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পিরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। এরমধ্যে ঢাকের বাদ্য আর প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ পার্বতীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শ্রী কৈলাশ প্রসাদ সোনার বলেন, এবার দেবীর আগমন ঘটবে ‘দোলায়’। শাস্ত্রমতে, দোলায় আগমনের অর্থ পৃথিবীতে মড়ক দেখা দিতে পারে। রোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা হানাহানিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দেবী গমন করবেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। এর ফলে সামাজিক বিশৃখলা, অরাজকতা, অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মন্ডপে মন্ডপে চলছে নানান প্রস্তুতি। সাজসজ্জন, আলোকসজন, প্যান্ডেল তৈরি ও ডেকারেশনসহ অন্যান্য কাজগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও মন্ডপের জন্য তৈরি করা হচ্ছে লক্ষী সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা, হাঁস, সর্পসহ প্রায় ১২টি প্রতিমা। পার্বতীপুর শহরের নতুন বাজার বারোয়ারী দুর্গা মন্দির এর রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চৌধুরী ডাঙ্গার প্রতিমা কারিগর শ্রী অনুপ চন্দ্র রায় বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে খড় ও মাটির কাজ শেষ করেছি, এখন মাটির ফিনিশিং ও রঙ-তুলিরকাজ হচ্ছে। আর এসব প্রতিমা তৈরিতে আমাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষী এবং দেব সেনাপতি কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবো নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়। তাই পূজা শুরুর দিন পর্যন্ত রঙ এর কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ কমিটির আহবায়ক দিপঙ্কর সাহা মানিক বলেন, উপজেলায় এবারে ১৪১টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির গুলোতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যাপারে সিসি ক্যামেরা থাকবে। অন্যান্য বছরে মতো এবারও প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলোকসজ্জাসহ নানাভাবে সাজানো হবে মন্ডপগুলোতে। এখন ঢাকের তালে পূজা শুরুর হওয়ার অপেক্ষা মাত্র। দূর্গাপুজা শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসব মূখর পরিবেশে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি মন্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্য ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে পার্বতীপুর উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা মো: নাসিম হাসান।
এ ব্যাপারে পার্বতীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চিত্ত রঞ্জন রায় জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ব্যাপকভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজা শুরুর আগেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি মন্ডপে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। একাজে প্রতিটি মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আনছার-ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশ চৌকিদার নিয়োগ করা হয়েছে। পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন বলেন, অন্যান্য বছরের মত এবারও দূর্গোৎসব জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মিলন মেলায় পরিনত হবে বলে আশা করছি।