1. onlinesokalerbani@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
  2. iqbalbarabil80@gmail.com : Sokaler Bani : Iqbal Sumon
  3. sharifuzzamanmdiqbal@gmail.com : Md Hozrot Ali : Md Hozrot Ali
বাংলাদেশ-ভারত ভূখণ্ডের ব্যবধান থাকলেও দুই গ্রামবাসীর সম্পর্ক অটুট | দৈনিক সকালের বাণী
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ-ভারত ভূখণ্ডের ব্যবধান থাকলেও দুই গ্রামবাসীর সম্পর্ক অটুট

অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম)
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩২ জন দেখেছেন
পাঁচ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকেই প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে বেশ দূরত্ব দেখা দিয়েছে।
এক দিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মৃত্যুতে সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে। তবে রাজনীতির এমন অস্থিতিশীল অবস্থাতেও মিলেমিশেই থাকছেন বাংলাদেশ-ভারতের দুই সীমান্তবর্তী গ্রাম।
সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের নেই সম্পর্কের ব্যবধান। চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া ? মাইলের পর মাইল কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও বাংলাদেশের অংশে খলিশাকোঠাল ও ভারতের অংশের গ্রামটি কোচবিহার জেলা সাহেবগঞ্জ থানার বসকোঠাল।
ভারত-বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ব্যবধান থাকলেও সম্পর্কের ব্যবধান নেই দুই গ্রামবাসীর মধ্যে।
যেখানে অধিকাংশ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাশের দেশ ভারত যাওয়া মানেই পাসপোর্ট-ভিসার মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতা লাগে। যেখানে এক দেশ থেকে অন্য দেশ যাওয়ার বেশ আগেই কিছু প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হয়। এরপর পাসপোর্ট ভিসার মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশ যেতে হয়। এটাই প্রতিটি দেশের নিয়ম ও আইন।
কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা খলিশাকোঠাল সীমান্তে যারা বসবাস করে আসছেন তাদের কাছে বিষয়টি একেবারে ভিন্ন রকমের। তাদের অনেকের কাছে সীমান্ত অদৃশ্য। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তারা আসা-যাওয়া করেন এপার-ওপার।
বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয়দের ও ভারতীয় সীমানায় বাংলাদেশিদের দেখা মিলে অহরহই। তারা এই সীমান্তের জমিতে কাজ করার জন্য প্রতিটি দিন ‘সীমানা অতিক্রম’ করেন এবং প্রতিটি দিন একে অপরের বাড়ীতে যাওয়ার আসাসহ খাবারও আদান প্রদান করে আসছে।
তবে তাদের জন্য ‘সীমানা অতিক্রম’ শব্দটি সম্ভবত ঠিক প্রযোজ্য না। কারণ, কৃষিকাজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্যে তারা শুধুমাত্র যাওয়া আসা করেন। শুধুই ফুলবাড়ী উপজেলার খলিশাকোঠালসহ উপজেলা জুড়ে ৩৬ কিলোমিটার সীমান্তে নয়, জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে দুই দেশের নাগরিকদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন।
খলিশা কোঠাল সীমান্তের বাসিন্দা আবুল কাসেম (৬১)। তার বাবারা দুই ভাই। আবুল কাসেমের বাবা এন্তাজ আলী। এন্তাজের ভাই মনছুর আলী। আপন দুই ভাইয়ের বাড়ীর দুরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ গজ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর যখন বাংলাদেশ-ভারত ভাগ হয় তখন দুই ভাই দুই দেশের নাগরিক। এন্তাজ আলী বাংলাদেশের নাগরিক ও মনছুর আলী ভারতের নাগরিক। দুই ভাই দুই দেশের নাগরিক হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের ব্যবধান ও বাংলাদেশ-ভারতে যাওয়া আসাতে কোন দিনও বাঁধা পড়েনি।
এন্তাজ আলী ও মনছুর আলী মারা যাওয়ার পর তাদের ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিদের মাঝেও সেই সম্পর্কের ব্যবধান এখনো কমেনি। পাশাপাশি দুই দেশের নাগরিকদের ভালো সম্পর্কে কারণে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ভারতীয় নাগরিকদের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। তবে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়েছে। সেটি সীমান্তের জিরোলাইনে থেকে ১৫০ গজ ও সর্বোচ্চ ৩০০ গজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
খলিশা কোঠাল সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশি বাসিন্দা আবুল কাসেম (৬১) জানান, দেখেন আমার বাড়ী থেকে ভারতে আমার জ্যাটাতো ভাইয়ের বাড়ীর দুরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ গজ। আমরা সব সময় দুই পরিবারের মাঝে প্রতিনিয় যাওয়া আসা করি।
আমার বাপ-জ্যাটার আমল থেকে আজ পর্যন্ত কোন আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্কের ব্যবধান কমেনি। দিন রাতে যাওয়া আসা হয়ে থাকে। শুধু আমাদের দুই পরিবারের মাঝে নয়। এখানে আমরা জ্যাটাতো ভাইয়ের বাড়ীর সাথে এক লাইনে প্রায় ২০ টি ভারতীয় পরিবারের বসবাস। সাথে লাগা আমাদের বাংলাদেশি পরিবারও প্রায় ২৫ টি।
তাদের সাথে আমরা অত্যান্ত মিলেমিশে যুগের পর যুগ বসবাস করে আসছি। সেটি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি -বিএসএফরাও জানেন। প্রায় দিনে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা খোঁজ খবর নেন এবং আমাদের বাড়ীর কাছেই প্রায় সময় পতাকা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সব সময় বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা খোঁজ খবর রাখেন।
ফলে আমরা দুই দেশের নাগরিকরা খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। যার কারণে আমাদের দুই দেশের নাগরিকদের আজ পর্যন্ত কোন বিবাদের সৃষ্টি হয়নি। তিনি আরও জানান বাড়ীর পূর্ব ও উত্তর দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নেই। কিন্তু তিন ফিট লম্বা সিঙ্গেল কাঁটাতারের বেড়া থাকায় ২৪ ঘন্টা ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা টহল দেন।
ওই সীমান্তের বাংলাদেশি নাগরিক হযরত আলী জানান, আমার বাড়ী থেকে মাত্র পাঁচ ফুট দুরস্ত প্রতিবেশি ভারতীয় নাগরিকের বাড়ী। আমরা এই সীমান্তে দুই দেশের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টি পরিবার বসবাস করে আসছি।
আমাদের মধ্যে আজ পর্যন্ত কোন দ্বন্দ্ব হয়নি। তারাও আমাদের বাড়ীসহ আশপাশের বিভিন্ন বিভিন্ন বাড়ীতে যাওয়া আসা করি। আমরাও তাদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করি। কোন সমস্যা নেই। এছাড়াও প্রায় দিন বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা আসেন খোঁজ খবর নিতে।
আর এক বাংলাদেশি সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিবেশি পরিবারগুলো সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। এছাড়াও কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা কিন্তু প্রতিবেশি ভারতীয় নাগরিকদের মতো ইচ্ছা করলেও আসতে পারে না।
কাঁটাতারের বেড়া ভিতরে থাকা অনেক নাগরিকদের জমি আছে। তারা নিদিষ্ট সময়ে এসে জমিতে কাজ-কর্ম করেন। কাজ কর্ম করার সময় দেখা গেছে পানি খাওয়াসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রয়োজন পড়ে। তখন তারা আমাদের বাড়ীতে এসে পানি ও খাওয়া দাওয়াও করেন। এভাবেই যুগের পর যুগ আমরা মিলেমিশে বসবাস করছি।
প্রতিবেশি ভারতের বসকোঠাল গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ আলীকে প্রশ্ন, আপনিতো বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, আপনার বাড়ীটি এখান থেকে কতদূর এমন প্রশ্ন করলে ওই ভারতীয় নাগরিক এরশাদ আলী বলেন, ঠিক কথায় বলেছেন। এখান থেকে ২০ গজ দুরে ঐযে দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ী।
আমার বাপ-দাদার আমল থেকে বাংলাদেশের প্রতিবেশির বাড়ীতে যাওয়া আসা করি। যদি বাংলাদেশ একটি আলাদা দেশ। কিন্তু এই টুক জায়গায় আসতে পার্সপোট ভিসা লাগে না আমাদের। আমরা এভাবেই সীমান্তে যুগের পর যুগ মিলেমিশে বসবাস করছি। সেটি আমাদের  বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি সদস্যরা জানেন। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীরা আমাদের সব সময় খোঁজ খবর রাখেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ী কাঁটাতারের বাহিরে আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৩৫ এর সাব পিলার ২ এর পাশে। আমরা যখন জরুরি প্রয়োজনে আমাদের হাট -বাজার ও অফিস আদালত এবং অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় বিএসএফের কাছে আধার কার্ড (জাতীয় পরিচয় পত্র) জমা দিয়ে যেতে হয়।
সকল ৬ টায় গেলে বিকাল চারটায় ক্যাম্প বন্ধ হওয়ার আগে আমাদের কার্ড সংগ্রহ করতে ফিরে আসতে হয়। ঠিক একই ভাবে যে সকল ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরে বাড়ী এবং কিছু কিছু জমি কাঁটাতারের বাহিরে তাদেরও আসতে আধার কার্ড (জাতীয় পরিচয় পত্র) জমা দিয়ে নিদিষ্ট সময়ে এসে আবার নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে যেতে হয়। আমাদের বাপ-দাদারা যেভাবে সীমান্তের জিরোলাইনে বসবাস করে আসছেন ঠিক আমরাও একই ভাবে বসবাস করে আসছি। আমাদের দুই দেশের নাগরিকদের মাঝে আজ পর্যন্ত কোন দুই কথা হয়নি। বাকী জীবন যেন এভাবেই কাটাতে পারি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত দৈনিক সকালের বাণী
Theme Designed BY Kh Raad ( Frilix Group )