কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা খলিশাকোঠাল সীমান্তে যারা বসবাস করে আসছেন তাদের কাছে বিষয়টি একেবারে ভিন্ন রকমের। তাদের অনেকের কাছে সীমান্ত অদৃশ্য। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই তারা আসা-যাওয়া করেন এপার-ওপার।
বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয়দের ও ভারতীয় সীমানায় বাংলাদেশিদের দেখা মিলে অহরহই। তারা এই সীমান্তের জমিতে কাজ করার জন্য প্রতিটি দিন ‘সীমানা অতিক্রম’ করেন এবং প্রতিটি দিন একে অপরের বাড়ীতে যাওয়ার আসাসহ খাবারও আদান প্রদান করে আসছে।
তবে তাদের জন্য ‘সীমানা অতিক্রম’ শব্দটি সম্ভবত ঠিক প্রযোজ্য না। কারণ, কৃষিকাজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্যে তারা শুধুমাত্র যাওয়া আসা করেন। শুধুই ফুলবাড়ী উপজেলার খলিশাকোঠালসহ উপজেলা জুড়ে ৩৬ কিলোমিটার সীমান্তে নয়, জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় একই চিত্র দেখা গেছে দুই দেশের নাগরিকদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন।
খলিশা কোঠাল সীমান্তের বাসিন্দা আবুল কাসেম (৬১)। তার বাবারা দুই ভাই। আবুল কাসেমের বাবা এন্তাজ আলী। এন্তাজের ভাই মনছুর আলী। আপন দুই ভাইয়ের বাড়ীর দুরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ গজ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর যখন বাংলাদেশ-ভারত ভাগ হয় তখন দুই ভাই দুই দেশের নাগরিক। এন্তাজ আলী বাংলাদেশের নাগরিক ও মনছুর আলী ভারতের নাগরিক। দুই ভাই দুই দেশের নাগরিক হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের ব্যবধান ও বাংলাদেশ-ভারতে যাওয়া আসাতে কোন দিনও বাঁধা পড়েনি।
এন্তাজ আলী ও মনছুর আলী মারা যাওয়ার পর তাদের ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশিদের মাঝেও সেই সম্পর্কের ব্যবধান এখনো কমেনি। পাশাপাশি দুই দেশের নাগরিকদের ভালো সম্পর্কে কারণে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ভারতীয় নাগরিকদের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। তবে দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যে যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়েছে। সেটি সীমান্তের জিরোলাইনে থেকে ১৫০ গজ ও সর্বোচ্চ ৩০০ গজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
খলিশা কোঠাল সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশি বাসিন্দা আবুল কাসেম (৬১) জানান, দেখেন আমার বাড়ী থেকে ভারতে আমার জ্যাটাতো ভাইয়ের বাড়ীর দুরত্ব মাত্র ১০ থেকে ১৫ গজ। আমরা সব সময় দুই পরিবারের মাঝে প্রতিনিয় যাওয়া আসা করি।
আমার বাপ-জ্যাটার আমল থেকে আজ পর্যন্ত কোন আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্কের ব্যবধান কমেনি। দিন রাতে যাওয়া আসা হয়ে থাকে। শুধু আমাদের দুই পরিবারের মাঝে নয়। এখানে আমরা জ্যাটাতো ভাইয়ের বাড়ীর সাথে এক লাইনে প্রায় ২০ টি ভারতীয় পরিবারের বসবাস। সাথে লাগা আমাদের বাংলাদেশি পরিবারও প্রায় ২৫ টি।
তাদের সাথে আমরা অত্যান্ত মিলেমিশে যুগের পর যুগ বসবাস করে আসছি। সেটি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি -বিএসএফরাও জানেন। প্রায় দিনে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা খোঁজ খবর নেন এবং আমাদের বাড়ীর কাছেই প্রায় সময় পতাকা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সব সময় বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা খোঁজ খবর রাখেন।
ফলে আমরা দুই দেশের নাগরিকরা খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। যার কারণে আমাদের দুই দেশের নাগরিকদের আজ পর্যন্ত কোন বিবাদের সৃষ্টি হয়নি। তিনি আরও জানান বাড়ীর পূর্ব ও উত্তর দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নেই। কিন্তু তিন ফিট লম্বা সিঙ্গেল কাঁটাতারের বেড়া থাকায় ২৪ ঘন্টা ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা টহল দেন।